খবর বরিশাল ডেস্ক: ডলার সংকটে কয়লার বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের। কয়লার মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় সোমবার (৫ জুন) দুপুর ১২টা থেকে কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।কয়লা এলে আগামী ২০/২৫ দিন পর আবার উৎপাদন শুরু হতে পারে।
পায়রার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আজ থেকে কয়েকগুণ বেশি লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।২০২২ সালের ২১ মার্চ চালু হওয়ার পর এবারই প্রথম কয়লার অভাবে পুরো উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের।জানা গেছে, কেন্দ্রটিতে কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ৯ মাসের বকেয়া অন্তত ৩৯ কোটি ডলার পাবে। তারা বলেছে, বকেয়া না দিলে কয়লা সরবরাহ করবে না।
ডলার সঙ্কটের কারণে বকেয়া পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সিংশ্লিষ্টরা।কয়লা সংকটের কারণে ২৫ মে থেকে এর একটি ইউনিট বন্ধ ছিল, দ্বিতীয় ইউনিটটিও আজ বন্ধ হয়ে গেল। এতে পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং দেখা দিতে পারে। এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বরিশাল ও খুলনা এবং ঢাকার কিছু অংশের জন্য বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য উৎস ছিল।
এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাতের বেলা চার থেকে পাঁচ বার লোডশেডিং হয়ে থাকে পটুয়াখালী জেলায়। একদিকে গরমে অতিষ্ঠ মানুষজন অন্যদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার থেকে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে প্রায় ১২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ৩ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াটের বিপরীতে গড়ে ২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করছে। আর পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭০০ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে থাকে। আর এতে প্রতিদিন ১২ হাজার টনের বেশি কয়লা পোড়ানো হয়।
জানা যায়, বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান সিএমসির মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা হতো। পরে দুই প্রতিষ্ঠানের সমান মালিকানায় বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) নামে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। বিগত দিনে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রকে ৬ মাস বাকিতে কয়লা দিয়েছে সিএমসি। পরে আরও ৩ মাসের বকেয়াসহ ৯ মাসে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩৯ কোটি ডলার। এই বকেয়া ডলার সংকটের কারণে পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যে কারণে চীন থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ডলার সংকট মেটাতে কয়েক দফা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেও সমাধানে আসতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
পটুয়াখালী ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, পটুয়াখালী জেলায় প্রতিদিন ১০ থেকে ১৩ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় সেখানে আমরা প্রতিদিন গড়ে ১০ মেগা ওয়াটের মত বিদ্যুৎ পেয়ে থাকি। এজন্য রোটেশন করে চালাতে গিয়ে কিছুটা লোডশেডিং হচ্ছে। চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে আর লোডশেডিং হবে না।
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, শাহ আব্দুল হাসিব বলেন, কয়লা সংকটের কারণে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে দুপুর ১২টা নাগাদ। ডলার সংকটের কারণে এই কয়লার সংকট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়লা আনার জন্য এল সি খোলা হয়েছে। আশা করছি এই মাসের শেষের দিকে কয়লাবাহী প্রথম জাহাজ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে এসে পৌঁছাবে। তখন আবার চালু হবে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply