২০১৭ সালে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে ৫ হাজার একর আয়তন নিয়ে জেগে ওঠে চর বিজয় নামের এই দ্বীপটি। শীত মৌসুম আসলে জেগে থাকে এই দ্বীপটি কিন্তু বর্ষা মৌসুম আসলে তা আবার ডুবে থাকে পানির নিচে। তবে জেলেদের কাছে এটি হাইরের চর নামেই পরিচিত। প্রতি বছর শীত মৌসুমে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে পুরো চরটি।
এছাড়া সবেচেয়ে বেশি লাল কাঁকড়া দেখা যায় এখানে। লাল কাকড়া এবং পাখির কলকাকলি মুগ্ধ করে পর্যটকদের। এছাড়াও এই চরটিতে রয়েছে সাদা ঝিনুকের ছড়াছড়ি। বর্তমানে লতাপাতা আর কিছু কিছু চারা গাছেরও দেখা মিলছে সেখানে।
জানা গেছে,ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের অভয়ারণ্য হওয়ায় সারা বছর এর আশপাশে থাকে জেলেদের উপস্থিতি। প্রথমে ভ্রমণপিপাসুদের একটি দল এই দ্বীপের সন্ধান পায়। বিজয়ের মাসে চরটি আবিষ্কার হয় বলেই চর শব্দের সঙ্গে বিজয় শব্দটি যুক্ত করে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তারা। পরে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বন বিভাগ ওই চরে গোল, ছইলা, কেওড়া ও সুন্দর গাছের চারা রোপন করে।
বর্তমানে অস্থায়ী বাসস্থান তৈরি করে মাছ শিকার ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করছেন জেলেরা। এর ফলে ওই চরে লাল কাকড়ার ছুটাছুটি ও অতিথি পাখির অবাধ বিচরন বাধাঁগ্রস্থ হচ্ছে বলে মনে করেন পরিবেশ কর্মীরা।
কুয়াকাটা আন্ধারমানিক ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক কেএম বাচ্চু বলেন, কুয়াকাটা থেকে মাত্র দেড় ঘন্টায় পৌঁছানো যায় চর বিজয়ে। এটি এখন দর্শনীয় পর্যটন স্পট হয়েগেছে। প্রতিবছর শীতের মৌসুমে আমরা হাজার হাজার পর্যটক নিয়ে যাই সেখানে।
লক্ষ লক্ষ অতিথি পাখি আর লাল কাঁকড়ার বিচরণ দেখতে প্রতিনিয়ত জনপ্রিয়তা বাড়ছে এই দ্বীপটির।বর্তমানে চরের আয়তন আরও বড় হচ্ছে এবং সবুজ বনায়ন তৈরি হচ্ছে।
চর বিজয় ভ্রমণ শেষে আদিল চৌধুরী নামের এক পর্যটক বলেন, কুয়াকাটায় এসে যদি চর বিজয়ে না যেতাম তাহলে আমার ভ্রমণটা পরিপূর্ণ হতো নাহ। যতদূর চোখ যায় শুধু অতিথি পাখির বিচরণ আর লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি দেখলে মন ভরে যায়। কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানগুলোর সাথে চর বিজয় যুক্ত হওয়ায় পর্যটকরা আরো বেশি আনন্দ পাবে বলে মনে করছি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কলাপাড়া জোনের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন,চর বিজয় আমাদের উপকূলের মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। ঝর বন্যা আর জলোচ্ছ্বাসের এখন সবচেয়ে বড় বাধা এই চর বিজয়।তার পাশাপাশি কুয়াকাটা পর্যটক নগরীতে যুক্ত হলো আরো একটি দর্শনীয় স্থান।
তবে চর বিজয়ে থাকা অতিথি পাখি এবং লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ বিনষ্ট করা যাবে না। বর্তমানে অস্থায়ী ভাবে জেলে পল্লী তৈরি করার চেষ্টা করছে উপকূলের জেলেরা। যা এই চর বিজয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য হুমকি স্বরূপ।
এ বিষয় ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, কুয়াকাটায় আগত সকল পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সেবা দেয়ার জন্য সব সময় আমরা প্রস্তুত থাকি। কুয়াকাটায় বর্তমানে ১৪ টির মত দর্শনীয় স্থান রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম একটি চর বিজয়।এটি পর্যটকদের কাছে দিনদিন খুবই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তাই পর্যটকদের ভ্রমণের সময় ট্যুরিষ্ট পুলিশের টহল টিপ তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
Leave a Reply