বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ২:২৪

নার্সিং ব্যবসার আড়ালে নানা অনিয়মের জন্ম দিয়েছে আ’ লীগের ক্ষমতা দেখানো জহির

নার্সিং ব্যবসার আড়ালে নানা অনিয়মের জন্ম দিয়েছে আ’ লীগের ক্ষমতা দেখানো জহির

dynamic-sidebar

খবর বরিশাল ডেস্ক॥ নাম তার জহিরুল ইসলাম। নার্সিং ব্যবসার আড়ালে নানা অনিয়ম দুর্নীতির জন্ম দিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি। অর্থের বিনিময় নিজে জেলা কৃষক লীগের সদস্য হয়েছেন, আর স্ত্রীকে করেছেন বরিশাল জেলা মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি।

আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তুলেছেন অনেক প্রতিষ্ঠান। বৈধ কাগজপত্র না থাকা, নিজস্ব ক্যাম্পাস ও স্থায়ী ভবন না থাক, শিক্ষক না থাকা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগ নিয়ে যারাই কথা বলেছেন তারাই তার রোষানালে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছেন। কখনও মামলা, গ্রেপ্তার, পুলিশ ও আওয়ামী মন্ত্রী মেয়রের প্রভাব খাটিয়ে হয়রানী করেছেন। গত সংসদ নির্বাচনে স্ত্রীর নামে আওয়ামী লীগের মনোয়নও কিনেছিলেন। নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখতে মেয়র ও প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনে অর্থ ব্যয় করেছেন। কখনো তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রভাবও দেখাতেন।

এক সময় জহির কাজ করতেন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে। স্ত্রী মেহেরুন্নেছা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ২০০৭ সালে নিজের ও স্ত্রীর নামে পটুয়াখালীতে শুরু করেন নার্সিং ব্যবসা। কয়েক বছরে গড়ে তোলেন আরও ১০টি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে নামে বেনামে অর্ধশতাধিক নাসির্ং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নেই নিজস্ব অবকাঠামো। ভাড়া বাড়িতে চলছে রমরমা ব্যবসা।

নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠার বিধিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকে এফডিআর থাকতে হবে। আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠানের নামে নিজম্ব জমি থাকতে হবে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩০ হাজার বর্গফুটের ভবন থাকতে হবে। সমৃদ্ধ ল্যাব-লাইব্রেরি ও অভিজ্ঞ শিক্ষক থাকতে হবে। কিন্তু জহিরের প্রতিষ্ঠানে এসবের কিছুই নেই। অবসরপ্রাপ্ত দুইএকজন নার্সিং শিক্ষক ছাড়া বাকিটা চলে শিক্ষানবীশ ও অতিথি শিক্ষক দিয়ে। কেবল ডিডাব্লিউএফ নার্সিং কলেজের নামে এফডিয়ার রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার প্রতিষ্ঠানের এক সময়ের ডিক্টের জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং নাসির্ং কাউন্সিলের নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চলতেন জহির। একটি এফডিআর দিয়ে জাল-জালিয়াতি করে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামে এফডিয়ার দেখিয়ে চলেন জহির। এক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড পরিবর্তন করে অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে চালানো তার স্বভাব। এক প্রতিষ্ঠানের আসবাব ল্যাবের মালামাল একাধিক প্রতিষ্ঠানে দেখান তিনি। এছাড়া একাধিক অধ্যক্ষ ও শিক্ষকের বকেয়া পরিশোধ না করে চাকুরীচুত করেছেন জহির।

তিনি আরও জানিয়েছেন, জহিরের অবৈধ কাজের সহযোগী ছিলেন সাবেক নার্সিং কাউন্সিলের রেজিষ্ট্রার সুরাই বেগম এবং বর্তমান ডেপুটি রেজিস্টার নিলুফা ইয়াসমিন। জহিরের এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে একাধিক টিম গঠন করা হয়। তবে এসব টিমকে অর্থের বিনিময় ম্যানেজ করতেন জহির। আর এই কাজেও সহযোগিতা করতেন বর্তমান ডেপুটি রেজিস্টার নিলুফা ইয়াসমিন।

এদিকে গত ১৫ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে জহিরুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রতিষ্ঠানসমূহের অনিয়ম দুর্নীতি সরেজমিন পরিদর্শন ও প্রতিবেদন দেয়ার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের যুগ্ম সচিব হারুন অর রশীদকে প্রধান করে ৩ সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হচ্ছেন উপসচিব (আইন-১ শাখা) ও অধ্যক্ষ কলেজ অব নার্সিং মাহাখালী।

তবে ইতিপূর্বে জহিরুল ইসলাম ও তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কয়েকবার তদন্ত হয়েছে। কিন্তু ডেপুটি রেজিস্টার নিলুফা ইয়াসমিনকে ব্যববহার করে মোটা অংকের লেনদেনে প্রতিবেদন নিজের পক্ষে নিয়েছে। আশঙ্কা এবারের তদন্তও তেমনটা হয়ে যেতে পারে।

ডিডাব্লিউএফ নাসির্ং কলেজ যে বাড়িতে চলছে সেই বাড়ির মালিক জাকিয়া ফাহিম অভিযোগ করেছেন, ২০২০ সালে চুক্তি মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও জোরপূর্বক বাড়ি দখল করে রেখেছে জহির। তার কাছে ৩৪ লাখ টাকা বকেয়া আদায়ে উকিল নোটিশ এবং সেনা ক্যাম্পে অভিযোগও করেছেন তিনি।

ডিডাব্লিউএফ নাসির্ং কলেজের শেয়ার হোল্ডার আবদুল্লাহ আল মওদুদ-এর শেয়ারের অর্থ প্রদান নিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত জহিরের বিরুদ্ধে ছয় মাসের কারাদ- এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন। প্রতিষ্ঠানের আর এক পরিচালক মো. নাজমুল আহসান লিটুর সাথে অর্থ কেলেংকারীর বিষয়টিও আদালতে গড়ায়। সিআর মামলা নং ১১৫১/২০২৩ মামলার তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পায়। এছাড়াও জহিরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে দায়ের করা ৮টি মামলা জেলা যুগ্ম জজ আদালতে বিচারাধী রয়েছে। জহিরের বিরুদ্ধে ছাত্রী ও নারী কেলেংকারীরর একাধিক অভিযোগ রয়েছে। যার স্থিরচিত্র ও অডিও রয়েছে।

অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, কলেজ অনুমোদনের পর কম টাকায় কিছু অদখল জায়গা কিনেছেন জহির। ওইসব জমি নিয়ে মামলা চলছে। জমির মালিকের নাম মো. মামুন। তার মুঠোফোন ০১৭১৫৩০৮৫৬০ নম্বরে যোগাযোগ করলে এর সত্যতা মিলে।

জহিরের নানা অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ২০২৩ সালের ১৩ মে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে নার্সিং শিক্ষায় সি-িকেটের সর্দার জহির। (নীতিমালা ছাড়াই চলছে জহির-ইয়াহিয়ার ৫৯টি নার্সিং কলেজ। এছাড়া দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সযুগান্তরসহ বরিশালের বিভিন্ন আঞ্চলিক দৈনিকেও তার অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।

 

সূত্রঃ বিডি ক্রাইম ২৪ 

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net