মো: ফিরোজ গাজী
বরিশালে ঈদের মার্কেট জমজমাট হয়ে উঠলেও ক্রেতাদের চোখে মুখে যেনো ক্ষোভ আর হতাশার ছাপ। এক রকম বাধ্য হয়েই এবার করতে হচ্ছে ঈদের কেনাকাটা। রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জাতাকলে সাধারণ মানুষ যখন পিষ্ট, ঠিক তখনই যেনো ঘাড়ের উপর আরেক চাপ। সীমিত আয়, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মিল না থাকা ইত্যাদি নিম্নবিত্ত পরিবারের জীবনে নিত্য দিনের সঙ্গী। তাদের প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হয় জীবনের কঠিন বাস্তবতা।
আয় আর ব্যায়ের মিল না থাকায় অনেকেই প্রিয়জনের হাতে তুলে দিতে পারছে না সামান্য ঈদ উপহার। আর এমন বাস্তবতার মধ্যে আজ পবিত্র রমজানের ২৪তম দিন অতিক্রম হচ্ছে। কয়েকদিন পরেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি ঈদ-উল-ফিতর।
এ ঈদকে কেন্দ্র করে মুসলিম জনগোষ্ঠী উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে। তবে তা নিম্ন মধ্যবিত্ত ও অতি নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য উৎসব নয়, বরং উৎসব যেনো রূপ নেয় এক চাপা কষ্টে। তাই বলে কি ঈদের উৎসব মোটেই উপভোগ করবে না তারা? অবশ্যই। ক্রয় সক্ষমতা থাক বা না থাক, ঈদ উপলক্ষে পরিবারের সদস্যদের নতুন পোষাক কিনে দেয়ার প্রবল ইচ্ছে প্রতিটি মানুষেরই থাকে।
তাই এ দোকান থেকে ও দোকান ঘুরে কিছুটা দামাদামি করে সাধ্যের মধ্যে পছন্দের পোষাক কিনতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। তবে আয়ের চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধিতে মাসের অর্ধেকটা সময় পার হতে না হতেই গাটের পয়সার সমাপ্তি ঘটে। ফলে এসব মানুষের হিসেব কষা টাকায় আর ইচ্ছে অনুযায়ী ঈদ আনন্দ করা হয়ে ওঠে না।
যারা সামান্য আয়ের কর্মজীবী, সীমিত খরচে সংসার চালাতেই যাদের হিমশিম খেতে হয়, কষ্টে চলা এসব মানুষের জন্য ঈদ শুধু মুখেই। ঈদ আসে ঈদ যায়, তবে এদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে না।
নগরীর চকবাজার ঘুরে জানা গেছে, রমজানের প্রথম দিকে মার্কেটগুলোতে বেচাকেনা ছিলো খুবই কম। তবে ১০ থেকে ২০ রোজা অতিক্রম করতেই বাড়তে শুরু করেছে ক্রেতাদের ভিড়। এসব ভিড় শুধু নামি-দামি ব্র্যান্ডের ফ্যাশন শো-রুমগুলোতে। তবে ভিন্ন চিত্র ফুটপাত, ভাসমান ও নন ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে।
এসব দোকানগুলোতে বেচাকেনা আগের বছরের তুলনায় কম হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে তাদের আশা ঈদ ঘনিয়ে আসলে তাদেরও বেচাকেনা বাড়বে।
কাশিপুরের বাসিন্দা ৪০ বছর বয়সী রাব্বী নামের এক ব্যক্তি জানান, কেনাকাটা প্রায় শেষ, তবে পোষাকাদীর দাম বেশি থাকায় খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে অনেক।
চকবাজারের চন্দ্রবিন্দু’র ২০তম আউটলেট’র ব্যবস্থাপক শামিম মিয়া জানান, প্রথম রমজানের দিকে বেচাকেনা কম ছিলো, তবে তা ধীরে ধীরে বেড়েছে, এখন পুরোদমে পোষাক বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে আলিয়া কাট, নায়রা, সারারা-গাড়ারা’র ব্যাপক চাহিদা। এই শাখার বিক্রয় প্রতিনিধি বেলাল বলেন, দাম আগের চেয়ে বেড়েছে, কারণ উৎপাদন খরচ বেশি তাই দামও একটু বেশি।
রাণীর হাট থেকে আসা ২৮ বছর বয়সী ব্যবসায়ী শিহাব নামের এক ক্রেতা জানান, শপিং করা শেষ তবে দামে আগুন।
গীর্জ্জামহল্লা’র নেক্সট প্লাস এর স্বত্বাধীকারী রতন জানান, বেচাকেনা খুবই কম, গতবারের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। এ বছর নতুন কী কী আইটেম আছে জানতে চাইলে এই প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি আরিফ জানান, পাকিস্তানী আলিয়াকাট, ফার্সি, মুসকান ও ভারতীয় সরারা-গাড়ারা মডেলের পোষাকের ব্যাপক কালেকশন রয়েছে।
চরমোনাই থেকে আসা শিক্ষার্থী শিফা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, কি কিনবো? প্রত্যেকটা জিনিসের দাম প্রায় দিগুন। শুধু পোষাক নয়, দ্রব্যমূল্যের কি আবস্থা দেখছেন? তিনি আরও জানান, যা কিনতে এসেছি তার অর্ধেক কিনেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
এদিকে জামা কাপড়ের পাশাপাশি জুতো’র দোকানেও দেখা গেছে ভীড়। তবে চকবাজার শাখার বাটা শো-রুমের বিক্রয় প্রতিনিধি আলিফ হোসেন জানান, বেচাকেনা ভালো না। তবে ঈদ আসতে আসতে বিক্রি বাড়বে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
নগরীর নিউ ভাটিখানা এলাকার বাসিন্দা চাকুরিজীবী সুনায়রা আয়মান জানান, সবকিছুর যে দাম, কি কিনবো বলেন? একটি দেড়শ টাকার ওড়না এখন ২৮০ টাকা। তিনি আরো জানান, মোটামুটি শপিং হয়েছে। আর একটু বাকি আছে সেটা রোজার শেষের দিকে কিনবো।
এদিকে নগরীর কাটপট্টি এলাকার কসমেটিকস’র দোকান ঘুরে দেখা গেছে, এসব পণ্যের বেচাকেনার অবস্থা আরও শোচনীয়, ক্রেতা নেই বললেই চলে। কাটপট্টি এলাকার ‘ফেমাস কসমেটিক্স’র স্বত্বাধীকারী আলামিন জাানান, এবার ব্যবসা খুবই মন্দা। মন্দা কেন জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলন, এসব পণ্য যারা কিনে তারা এখন প্রায় সবাই অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়েছে। অনলাইনে অর্ডার করছে, যে কারণে এসব দোকানে বেচাকেনা কম।
এদিকে নগরীর বহুমুখী সিটি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, সেখানের ব্যবসায়ীদের কেনাবেচায় ধস নেমেছে। ম্যান’স পয়েন্ট’র স্বত্বধীকারী আরিফুর রহমান জানান, সিটি মার্কেটে এমনিতেই কাস্টমার কম, তার উপর এই মার্কেটে নারী ও শিশুদের পোষাক বেশি থাকে না। এখানে নগরীর পুরুষ ক্রেতাই বেশি, যারা ঈদের দুই একদিন আগে কিনতে আসে।
একই মার্কেটের কালার পয়েন্টের বিক্রয় প্রতিনিধি নাজমুল হক দাবী করেন, বেচাকেনা ভালো, তবে দাম বেশি চাইলেই কিছু না বলেই ক্রেতারা চলে যান।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply