অনলাইন ডেস্ক// জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলে ব্যবহারিক জীবনে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য জনগণের প্রতি নির্দেশনা জারি করবে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন। এছাড়া শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাও বাধ্যতামূলক করবে দলটি। আত্মিক পরিশুদ্ধি, চিন্তা-বিশ্বাস ও কর্মের পরিশুদ্ধি ঘটানোর জন্য ধর্মীয় অনুশাসন বাস্তবায়ন করবে দলটি। নির্বাচন উপলক্ষে প্রকাশিত ইশতেহারের ৩০ দফার মধ্যে এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছে ইসলামী আন্দোলন।শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ইশতেহার তুলে ধরেন দলটির আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।ইশতেহারে রেজাউল করীম বলেন- ‘ধর্মের ব্যাপক প্রচার করা হবে। ধর্মীয় অনুশাসন বাস্তবায়ন করা হবে। ধর্মের বিরুদ্ধে যাতে কেউ ব্যক্তিগতভাবে অথবা রাজনৈতিকভাবে কটূক্তি করতে না পারে, সে ব্যাপারে আইন পাস করা হবে। কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান করা হবে।’দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নির্মূলকরণে ৯ দফা কর্মসূচির মধ্যে কথা বলেন সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন- ‘আদর্শ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে।’রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনে ইশতেহারে ৫ দফা কর্মসূচি তুলে ধরেন চরমোনাই পীর। তিনি বলেন- ‘নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় অনুশাসন বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের আত্মিক পরিশুদ্ধিসহ চিন্তা-বিশ্বাস ও কর্মের পরিশুদ্ধি ঘটানো হবে।’নাগরিক সুবিধা প্রদানের জন্য ২০টি অঙ্গীকার করা হয়েছে ইশতেহারে। দলটির আমির বলেন- ‘খাদ্যদ্রব্যের মূল্য ২০ শতাংশ কমানো হবে। জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম ৩০ শতাংশ কমানো হবে। রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ করা হবে। বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ সব গণপরিবহনের লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা হবে। জমির খাজনা, সব ধরনের টোল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স ৩০ শতাংশ কমানো হবে। সার, সেচ ও বীজ অর্ধেক মূল্যে বিতরণ করা হবে। জীবনমান উন্নয়নের জন্য শ্রমিকের বেতন দ্বিগুণ করা হবে। চিকিৎসার খরচ ৫০ শতাংশ কমানো হবে। সব সেক্টরের পরিবহনে ভাড়া ৩০ শতাংশ কমানো হবে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হবে। মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিনদের পাশাপাশি মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সেবককে সম্মানজনক ভাতা প্রদান করা হবে। আয় কর ও ভ্যাট ৩০ শতাংশ কমানো হবে। আমদানি ও রফতানি শুল্ক ৩০ শতাংশ কমানো হবে। লোডশেডিং বন্ধ করা হবে। গ্যারান্টিসহ রাস্তাঘাট এবং সব অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। বৈদেশিক ঋণ ১৫ বছরের মধ্যে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ২৫ শতাংশ বাড়ানো হবে। বাংলাদেশকে ১৫ বছরের মধ্যে উন্নত ও কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করা হবে।’তবে বেসকাররি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য কোনও প্রস্তাবনা নেই ইসলামী আন্দোলনের ইশতেহারে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পেলে কোন প্রক্রিয়ায় জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম ৩০ শতাংশ কমানো হবে— তা পরিষ্কার করেনি দলটি। ভ্যাট, আয়কর কমানোর কথা বলা হলেও রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাষ্ট্রের আয়ের খাত নিয়েও কোনও বিষয় উঠে আসেনি দলটির ইশতেহারে।ইশতেহারের ১৬টি অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি তুলে ধরা হয়। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা, দুর্নীত-সন্ত্রাস নির্মূল করা, সংসদ নির্বাচনের পদ্ধতি আমূল সংস্কার করা, নারীদের অগ্রাধিকার প্রতিষ্ঠা, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ইত্যাদি।অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে ১৬ দফার প্রস্তাব তুলে ধরেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। এরমধ্যে— সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক নির্বাচনকালীন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে নির্বাচন সুষ্ঠু প্রমাণিত না হলে নির্বাচনে ফল বাতিল করা এবং আদালতের রায়ই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে— এমন নির্বাচনি আইন করা। এছাড়া, অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের উদ্যোগ নেওয়া কথা তুলে ধরা হয় ইশতেহারে।শিক্ষা বিষয়ে ৮ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘সৎ চরিত্রবান, দক্ষ ও আদর্শ নাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে নৈতিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় আদর্শের আলোকে ঢেলে সাজানো হবে। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বত্র মেয়েদের জন্যে আলাদা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে। নারীদের পাঠদানে পর্যাপ্ত নারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার মৌলিক বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে সিলেবাসকে যুগোপযোগী ও অভিন্ন করা হবে।’কৃষি বিপ্লব ও কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৫ দফা, আইন ও বিচার সম্পর্কে ৮ দফা, পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ৫ দফা, অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ৬ দফা, নারী অধিকার ও ক্ষমতায়ন সম্পর্কে ৯ দফা প্রস্তাব ইশতেহারে তুলে ধরা হয়।মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ব্যয়, পরিবহনের ভাড়া, তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার যাবতীয় ব্যয়ভার রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করার কথা বলেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তবে যুদ্ধপরাধীদের বিচার বিষয়ে কোনও কিছু নেই ইসলামী আন্দোলনের ইশতেহারে।ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোখতার হোসেন, মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সহকারী মহসচিব আমীনুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ কাশফী এবং নির্বাচনী প্রচার সেলের গণমাধ্যম সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম কবির প্রমুখ।’
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply