নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। গত ১৫ দিন ধরে পানির পাম্প নষ্ট থাকায় এ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এতে রোগীদের মাঝে পানির জন্য চলছে হাহাকার।
সূত্রে জানা যায়, গত তিন মাস ধরে হাসপাতালের পাম্পটিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বেশ কয়েকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এর প্রেক্ষিতে গত ২৭ ডিসেম্বর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে চিঠি দেয়া হলেও এর কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ১৫ দিন ধরে পাম্প নষ্ট থাকায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। পানি চেয়েও পাচ্ছেন না রোগীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই অসুস্থ! পানি না থাকায় অতিরিক্ত দুর্গন্ধের কারণে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করাই দায়। রোগীদের ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায় চারদিক নোংরা ও দুর্গন্ধময় হয়ে আছে। এখানে রোগীদের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন এসে তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হাসপাতালের সবগুলো টয়লেটের অবস্থা করুণ। হাসপাতালে প্রবেশ করলে দুর্গন্ধে মুখে কাপড় দিয়ে নাক চেপে ধরতে হয়।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা অভিযোগ করেন, নিয়মিত হাসপাতালের ওয়ার্ড ও টয়লেট পরিষ্কার করা হয় না বলেই তীব্র দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। তার ওপর গত ১৫ দিন ধরে পানি না থাকায় এ ভোগান্তির মাত্রা আরও বহুগুণ বেড়ে গেছে। পানি না থাকায় হাসপাতালে থাকা রোগী পায়খানা ও প্রস্রাব করতে অসুবিধায় পড়ছে। তাদের পায়খানা-প্রস্রাব করার জন্য নিচে গিয়ে কখনো নদী থেকে অথবা অন্য মানুষের বাড়ি থেকে পানি নিয়ে প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রসূতি মায়েদের। প্রসূতি মায়েদের পক্ষে হাসপাতালের নিচে নেমে অন্য কোথাও গিয়ে পায়খানা-প্রস্রাব করা সম্ভব নয়। এতে করে বেশিরভাগই রোগীই হাসপাতাল বিমুখ হয়ে পড়ছে। প্রসূতি ওয়ার্ডে দুই থেকে তিনজন রোগী বাদে পুরো ওয়ার্ডই খালি রয়েছে।
মধুখালী এলাকা থেকে আসা শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি গত ১০ দিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি হাসপাতালের পানি পাচ্ছেন না। পানি না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তাকে। এছাড়া খাওয়ার পানিও দোকান থেকে কিনে খেতে হচ্ছে।
ভিংরাবো এলাকা থেকে আসা বৃদ্ধা রাইজা বেগম (৭০) বলেন, আমি গত এক সপ্তাহে ধরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। হাসপাতালে পানি না থাকায় পায়খানা-প্রস্রাব করতে পারছি না। আমি বৃদ্ধ মানুষ ঠিক মতো হাঁটতেও পারি না। পায়খানা প্রস্রাবের জন্য নিচে যেতে অনেক সমস্যা হয়।
জাঙ্গীর এলাকা থেকে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী জানান, হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ সরকারি ওষুধও তারা সঠিকভাবে পান না। হাসপাতালের ফার্মেসিতে গিয়ে ফার্মাসিস্ট বাদল ও মোস্তফার কাছে সরকারি ওষুদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে গেলে তারা ওষুধ না দিয়ে রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাঈদ আলম মামুন বলেন, পানির পাম্পটি মেরামত করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে লোকজন এসেছে। শিগগিরই পানির পাম্পটি মেরামত করা হবে। পানির পাম্প নষ্ট থাকায় হাসপাতালে পায়খানা ও ওয়ার্ড পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। পাম্পটি ঠিক হয়ে গেলে সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply