আরিফ ইন্টার শেষ করে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। পরিবারের সদস্য শুধু মাত্র আরিফ ও তার মা। বাবা মারা গেছে অষ্টম শ্রেনীতে থাকাকালীন। মা অন্যের বাড়িতে ও ঘড়ে একটি সেলাই মেশিন আছে তা দিয়ে কাজ করে। ঘড়ের ভিটা ও শতাংশ তিনে জমি আছে আছে বাবার রেখে যাওয়া। ঢাকায় হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করে আরিফ। মা পড়ালেখার খরচ চালায়। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে চলাফেরা করতে শুরু করেছে আরিফ। বন্ধুরা একেক জন বড় ঘড়ের সন্তান। ক্যাম্পাসে কেউ আসে বাইক নিয়া আবার কেউ আসে কার নিয়া। বন্ধুদের সাথে চলতে চলতে আরিফের মধ্যে আরিফের মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। ঢাকায় এসেছে বছর দুই হয়ে গেছে। নতুন রিলেশনও শুরু করেছে। মেয়েটির নাম কাকন। আরিফের এখন অনেক বন্ধু। লেখাপড়ার দিকে তেমন মনোযোগ নেই। এক বন্ধুর জন্মদিনে বিশাল পার্টিতে গেল আরিফ। বন্ধুদের সাথে সখের বসে গ্রহণ করলো ইয়াবা। বেশ ভালোই লাগলো ইয়াবা আরিফের কাছে। নেশায় পরিনত হয়েছে মারাত্বক ভাবে প্রতিদিনই এখন তার ইয়াবা লাগে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকা। বাড়ি থেকে মা যতটুকু টাকা পাঠায় থাকা-খাওয়া পর তা দিয়ে চলাফেরাই মুশকিল হয়ে পরে। তার পরেও বন্ধুদের কাছ থেকে ধারকর্য করে প্রতিদিনই ইয়াবা গ্রহণ করে আরিফ। একদিন এক বন্ধু প্রস্তাব করলো ইয়াবার ব্যবসার জন্য। দুজনে শেয়ারে। আরিফ রাজি হলো কিন্তু শেয়ারে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে তাকে। আরিফ সোজা চলে গেল বাড়িতে। মা তো ছেলেকে দেখে খুশি, ছেলে বাড়িতে এসেছে । খাওয়া দাওয়া বিশ্রামে পরে আরিফ চিন্তা করছে vwv2কিভাবে বলবে কথাটা মাকে। হুম আইডিয়া।
আরিফঃ মা।
মাঃ বল বাবা।
আরিফঃ মা কলেজের কাজে জলদি ২০ হাজার টাকা লাগবে।
মাঃ ২০ হাজার টাকা!
আরিফঃ হুম। দুই একদিনের মধ্যেই দিতে হইবো।
টাকার কথা শুনে আরিফের মা তো অস্থির। মা চিন্তা করতে লাগলো, টাকার অভাবে আমার পোলাডা পড়াতে পারবোনা! আমার পোলাডা অনেক বড় হতে পারবে না। যে করেই টাকা যোগার করতে হবে আমার। যত কষ্ট হোক।’
আরিফের মা কোন জায়গা দিয়ে টাকা জোগাড় করতে না পেরে দিল জমি বিক্রি করে। তারপর আরিফের হাতে টাকা দিল। আরিফতো টাকা পেয়ে খুব খুশি।
আরিফঃ মা এতো টাকা তুমি কই পাইলা?
মাঃ জমি বিক্রি করে দিলাম।
আরিফঃ কি। হুম। তুই বড় হয়ে আনেক জমি করতে পারবি।
আরিফ টাকা নিয়ে ঢাকায় চলে আসলো। ঢাকায় শুরু করলো ইয়াবার ব্যবসা। প্রসাশনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা চলছে। অল্প দিনে ভালোই লাভবান হয়েছে সে। আরিফ এখন ভালো টাকার মালিক। মায়ের সাথে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। আরিফ বিয়ে করে ফেললো কাকনকে। মাকে জানায়নি। ফ্লাটে থাকে এখন বউকে নিয়ে। আরিফ সাহেব এখন নিজের গাড়িতে চলাফেরা করে। এদিকে মাতো ছেলের চিন্তায় প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেছে। মায়ের বয়স হয়েছে। শরীরে নানা রোগের সৃষ্টি। অন্যের বাড়িতে কাজও ঠিকমতো করতে পারছেনা। প্রতি বেলা ভাতও খেতে পারছেনা। মায়ের সাথে যোগাযোগ পুরো বন্ধ। মা পথ চেয়ে থাকে এই বুঝি কলিজার টুকরা আরিফ এলো। আরিফের ব্যবসা ও নেশা এখন প্রকট আকার ধারন করেছে। নেশার সাথে জড়িত বলে কাকনের সাথে হয়েছে ডিভোর্স। আরিফের বন্ধুকে এর মধ্যে একদিন পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর আরিফ তার বন্ধুর কোন খবর নেয় নি। নিজেই এখন ব্যবসার সব। এখন আর শুধু ইয়াবা নয় ফেন্সিডিল,মদ সহ দেশি বিদেশী মাদকদ্রব্যের ব্যবসা এখন তার। সারাদিন নেশার উপরে থাকে। বন্ধুও এর মধ্যে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। ছারা পেয়ে আরিফের কাছে আসলে আরিফ পরিচয় দেয়নি তাকে।
আরিফঃ আমি এ পর্যন্ত নিজের যোগ্যতায় এসেছি। আর তুই আমার টাকায় চলতি এতদিন। তোকে আমার দরকার নেই।
বন্ধুতো এত্তো সহজে ছারবেনা। করতে লাগলো বিশাল ছক। ছকের মাধ্যমে একদিন খুন করলো আরিফকে তার বন্ধু। পরে আরিফের লাশ তার কিছু পরিচিত লোক বাড়িতে নিয়ে গেল। বিধাব মায়ের একমাত্র অবলম্বন ছেলের লাশ দেখে মা নির্বাক, কাঁদতেও পারছেনা, সাড়া গ্রামে শুধুই আহাজারি।
লেখক পরিচিতিঃ মজিবর রহমান নাহিদ , সভাপতি বরিশাল তরুণ সাংবাদিক ফোরাম
ই-মেইল nahidbsl2014@gmail.com
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply