নিজস্ব প্রতিবেদক : ভালো পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে যুক্ত ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহবাজ মিঞা শোভন। পড়াশোনা, খেলাধুলা, উপস্থাপনা, ফ্রিল্যান্সিং, ব্যবসা পরিচালনা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে তিনি নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
বিনয়ী, পরোপকারী ও বিভিন্ন প্রতিভার অধিকারী হওয়ায় সবার কাছে শোভন একটি প্রিয় নাম, ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখ। তথ্য প্রযুক্তির বিষয়ে বিশদ ধারনা থাকায় বন্ধুরা তাকে ডাকেন ‘গুগল শোভন’ নামে।
শোভন ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএতে মেধা তালিকায় ৩৪তম হয়েও ভর্তি হননি। একই বছর তিনি বিমান বাহিনীর অফিসার ক্যাডেট হিসেবে মনোনীত হলেও যোগদান করেননি। ছোটবেলা থেকেই তার কম্পিউটারে আসক্তি ছিল। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবেন। সেই লক্ষ্যে তিনি ভর্তি হন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।
শোভন ২০১২ সালে সরকারি বাউফল মডেল স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ২০১৪ সালে সরকারি বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। বাবা মো. শোহরাব হোসেন কয়েস মিঞা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মহান মুক্তিযুদ্ধে জাফর বাহিনীর হয়ে ৯ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। বাবার অনুপ্রেরণাই তার স্বপ্নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলা। মা মিসেস সাহিদুন্নেছা ২০১১ সালে বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। আদর্শ এবং নৈতিকতার চর্চা তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শোভন ২০১৩ সালে ডাচ বাংলা ব্যাংক প্রথম আলো গণিত অলিম্পিয়াডে বরিশাল অঞ্চলে প্রথম রানার্স আপ হন। একই বছর এইচএসবিসি- প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগিতায় বরিশাল অঞ্চলে প্রথম এবং জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। ২০১৩ সালে ন্যাশনাল আর্থ অলিম্পিয়াডে জাতীয় ও বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশ শিশু সংসদে বিরোধী দলের চীফ হুইপ হিসেবে অধিবেশনে অংশগ্রহণ করে লাভ করেন ক্রেস্ট, সম্মাননা স্মারক এবং মাননীয় স্পিকার কর্তৃক অভিনন্দন পত্র। এছাড়া স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে বিতর্ক, আঞ্চলিক গান,উপস্থাপনা, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতায় পেয়েছেন নানা পুরস্কার ও সম্মাননা।
বর্তমানে তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটি, বিসিএস ক্লাব, রোবটিক্স ক্লাব, সিএসই স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সহ অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার টুর্নামেন্ট আয়োজন, ক্রীড়া সামগ্রী প্রদান ও পৃষ্ঠপোষকতা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অসহায় শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি, ল্যাব ফি, বিভাগ উন্নয়ন ফি প্রদান করে তাদের স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জাগ্রত তারুণ্য’। যেখানে দুই হাজার তরুণ সদস্য হিসেবে রয়েছেন। খুব অল্প সময়ে সংগঠনটির উদ্যোগে ৫০০ অসহায় রোগীর জন্য রক্তের ব্যবস্থা করা, ২০০ জনকে খণ্ড-কালীন কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা, গরিব শিক্ষার্থীদের টিউশনের ব্যবস্থা করে দিতে পারা সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে করেন শোভন। নিজ অর্থায়নে ১২ জন সুবিধা বঞ্চিতদের পড়াশোনা করানো দায়িত্বভার নিয়েছেন ২ বছর আগে। ভালোবাসা দিবস, নববর্ষ, ফল উৎসব, ঈদ উৎসব, মেহেদী উৎসবে ছোটেন পথ-শিশু, বৃদ্ধ, এতিম, প্রতিবন্ধীসহ অসহায় মানুষদের কাছে। তাদের সাথে পালন করেন দিবসগুলো।
অর্থের উৎস জানতে চাইলে বলেন, ‘নিজস্ব ব্যাচে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে তার। সেখানকার উপার্জিত অর্থ দিয়েই এসব কাজে অর্থের জোগান দেন তিনি। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং করেও আয় করেন তিনি।’
শুধু পড়াশোনা বা জনসেবা না, শোভন তার দক্ষতা দেখিয়েছেন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও। তিনি সবার কাছে একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবেও পরিচিত। বরিশাল শহরে একাধিক অ্যাডমিশন ও অ্যাকাডেমিক কেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক। নিজের রয়েছে ই-কমার্স সাইট, অনলাইন চকোলেট কর্নার, পোশাকের বিজনেস, এবং প্রকাশনী বিজনেস। মডেল হয়ে কাজ করছেন সিলভার রেইন ব্র্যান্ডের। বিভিন্ন কলেজে নিরাপদ ইন্টারনেট ও সাইবার সিকিউরিটি সহ নানা আইটি রিলেটেড সেমিনার ও ওয়ার্কশপ করে থাকেন। প্রতি শুক্রবার ও শনিবারে গ্রামের তরুণদের নিয়ে আয়োজন করেন ক্যারিয়ার আড্ডার।
সব মিলিয়ে তার মাসিক আয় আড়াই লাখের মত। তিনি বরিশাল বিভাগের সর্বকনিষ্ঠ করদাতা হিসেবে কর দিয়ে আসছেন ২০১৫ সাল থেকে।
লেখালেখির ক্ষেত্রেও নিজের দক্ষতার ছাপ রেখেছেন তিনি। এইচএসসি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি টেক্সট বইয়ের গ্রন্থ প্রণেতা। লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক কয়েকটি বই (টলুইন, রসায়নের রসগোল্লা, জৈব রসায়নের উড়োজাহাজ)।
জনপ্রিয় ও পরিচ্ছন্ন ছাত্রনেতা হিসেবেও রয়েছে বেশ পরিচিতি তিনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে চান তিনি।
ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে দেশের একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা হওয়ারও ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তিনি।
ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিজের একটা সফটওয়্যার ফার্ম খোলার ইচ্ছা আছে। একজন দেশসেরা তরুণ উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে মেলে ধরতে চাই।’
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply