রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ২:০৯

শিরোনাম :
কথা দিচ্ছি আপনাদের সেবায় আমি সর্বদা পাশে থাকবো : চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম জাকির হোসেন উপজেলার উন্নয়নে আপনাদের পাশে আমি সর্বদা রয়েছি -ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিন মোটরসাইকেল প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা, আহত-২ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া কে এই জাকির হোসেন প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম যারা আমার জন্য কাজ করেছে আমি তাদের রেখে কখনো পালিয়ে যাইনি-এসএম জাকির হোসেন রেমিটেন্স আহরণে রূপালী ব্যাংকের ২ দিন ব্যাপী ক্যাম্পেইন সম্পন্ন সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ

মিন্নির বাবার অভিযোগের তির এমপি শম্ভুর দিকে

dynamic-sidebar

বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামিদের পক্ষে প্রভাবশালী মহল কাজ করছে। তাদের কারণেই খুনের ১৯ দিন পরে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি করা হয়েছে। মিন্নিকে নির্যাতন ও জোর-জবরদস্তি করে রিমান্ড শেষ হওয়ার দুই দিন আগেই তড়িঘড়ি করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছে।

শনিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের কাছে এমন সব অভিযোগ করেছেন রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। এ সময় নিজের মেয়েকে নিরপরাধ দাবি করে তাকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট দাবি জানান তিনি।

এর আগে গত শুক্রবার বরগুনা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার স্বামী কলেজছাত্র রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে জবানবন্দি দেন।

মিন্নির বাবা অভিযোগ করে বলেন, আসামিদের শনাক্ত করার কথা বলে মঙ্গলবার সকালে মিন্নিকে বাসা থেকে ডেকে নেয় পুলিশ। তাকে ১২ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। ওকে আটকে রেখে নির্যাতনের পর ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর-জবরদস্তিমূলক শেখানো জবানবন্দি রেখেছে।

কিশোর দাবি করেন, ‘আমার মেয়ে অসুস্থ। শুক্রবার রাতে একজন দারোগা আমার বাসায় এসে মিন্নির চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে যায়। তার পরদিনই জোর-জবরদস্তি ও নির্যাতন করে আমার মেয়ের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছে। ওকে শেষ করে ফেলা হয়েছে। আমি বাঁচতে চাই না। আমি আত্মহত্যা করব।’

মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘আমার মেয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। এটাই কি তার অপরাধ? সন্ত্রাসীদের পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল কাজ করছে। সে কারণেই ঘটনার ১৯ দিন পরে প্রধান সাক্ষী থেকে মিন্নিকে আসামি করা হয়েছে। প্রভাবশালী মহলটি খুনিদের আড়াল করতেই আমার মেয়েকে ফাঁসাচ্ছে। মিন্নি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তাই প্রভাবশালী মহল জানে, মিন্নিকে মামলায় ফাঁসিয়ে দিলে আসামিরা সবাই খালাস পেয়ে যাবে।’

এ জন্য মোজাম্মেল হোসেন কিশোর প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি স্বজনহারা, আমার মেয়ে স্বামীহারা হয়েছে। কিন্তু আজকে ওরা আমার মেয়ের জীবন নিয়ে খেলা করছে। আমার মেয়ের জীবন বিপন্নের পথে। আমি নিজে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অবরুদ্ধ। আমার ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে আমার বেঁচে থেকে কী লাভ? আমি আত্মহত্যা করব!’

এদিকে প্রভাবশালী মহল কারা, সে বিষয়ে জানতে চাইলে মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বরগুনার স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভুকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘প্রভাবশালী মহল কারা আপনিও জানেন, এমনকি সবাই যানে। আমি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাই না। আমি অসহায়, দুর্বল। আমি চাই আমার নির্দোষ মেয়েকে নির্যাতন থেকে মুক্তি করতে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শম্ভু বাবুর আমার দিকে দৃষ্টি থাকলে নিজের স্বামীকে হত্যার অভিযোগ আমার মেয়ের কাঁধে উঠত না। তিনি চাননি বলেই আজ আমার মেয়ে প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আমার মেয়েকে যেদিন আদালতে তোলা হয়, সেদিন তার ছেলে সুনাম দেবনাথ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে, যাতে কোনো আইনজীবী আমার মেয়ের পক্ষে আদালতে না দাঁড়ায়।’ এটা থেকেই অনেক কিছু প্রমাণ পায় বলে মন্তব্য করেন কিশোর।

তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের অভিযোগ অস্বীকার করে বরগুনা-২ আসনের এমপি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু বলেন, ‘কিশোরের মাথা ঠিক নাই, তাই পাগলামি করছে। ও আমাকে জড়িয়ে যা করছে, সেটা অন্যায় করছে। আমি আজ (শনিবার) ওর ভাই খালেকের সাথে কথা বলেছি ওকে এসব পাগলামি না করার জন্য। ওর ভাইও আমাকে বলেছে যে মেয়ে হত্যা মামলায় ফেঁসে যাওয়ায় কিশোরের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’

এমপি শম্ভু আরো বলেন, ‘রিফাত হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে সেটা দুঃখজনক। তাছাড়া অভিযোগ করলেই হবে নাকি? এর তদন্ত হচ্ছে।ঘটনার সাথে যেই জড়িত থাকবে তার বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। কিশোর যেসব অভিযোগ তুলেছে, সেসব আজগুবি গল্পের কোনো প্রমাণ? প্রমাণ ছাড়া আইনের কাছে তার এসব কথার দাম নেই। আমাদের অবস্থান খুনিদের বিপক্ষে। তাই আমরাও চাই রিফাত হত্যার বিচার।’

ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু অভিযোগ করে বলেন, ‘মূলত আমরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রয়েছে, যারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। গত সংসদ নির্বাচনেও ওই প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছিল। তারাই এখন মিন্নির বাবা কিশোরকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে বলাচ্ছে।’

অন্যদিকে জোর-জবরদস্তি জবানবন্দি গ্রহণের অভিযোগের বিষয়ে বরগুনা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মামলার তদন্ত করতে গেলে অনেক কথা শুনতে হয়। কিন্তু এসব কথার কোনো ভিত্তি থাকে না। মিন্নিকে জোর-জবরদস্তি জবানবন্দি দেয়ানোর যে অভিযোগ, সেটা সত্যি নয়। মিন্নি নিজে থেকেই আদালতে রিফাত হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন বরগুনায় স্ত্রীর সামনে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে প্রধান সাক্ষী ছিলেন নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।

তাছাড়া মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। রিফাত ও রিশান ফরাজীসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে ৬ জন এজাহারভুক্ত আসামি। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১১ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net