মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৭:০৭

শিরোনাম :
প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম যারা আমার জন্য কাজ করেছে আমি তাদের রেখে কখনো পালিয়ে যাইনি-এসএম জাকির হোসেন রেমিটেন্স আহরণে রূপালী ব্যাংকের ২ দিন ব্যাপী ক্যাম্পেইন সম্পন্ন সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ বরিশাল সদরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাদিস মীরের মনোনয়ন দাখিল বরিশালে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস জনজীবন,বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ! বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জসিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র দাখিল বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এসএম জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র দাখিল
বরিশালে স্কুলের মাঠে প্রধান শিক্ষকের মাছ চাষ !

বরিশালে স্কুলের মাঠে প্রধান শিক্ষকের মাছ চাষ !

dynamic-sidebar

এম.কে. রানা : নগর সংলগ্ন পপুলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিশাল খেলার মাঠটিতে কৌশলে মাছ চাষ করে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, শরীর চর্চা ও বিনোদন থেকে বঞ্চিত করছেন প্রধান শিক্ষক।

প্রায় ৮শ’ শিক্ষার্থীর এ বিদ্যালয়টিতে ২০১৩ সালে প্রধান শিক্ষক পদে মোঃ ফরিদ উদ্দিন যোগদানের পর একের পর থেকে একের পর অনিয়ম শেষে খেলার মাঠটি পর্যন্ত কৌশলে মাছ চাষে ব্যবহৃত করছেন। সরকার বিদ্যালগুলোতে ক্লাস শুরুর পূর্বে শারিরীক শিক্ষা (পিটি) করানো বাধ্যতামূলক থাকলেও এ বিদ্যালয়টিতে সব কিছু থাকলেও প্রধান শিক্ষককের খামখেয়ালীতে তা সম্ভব হয় না।

বিদ্যালয়ের সামনে প্রায় দেড় একরের বিশাল মাঠ থাকলেও সেখানে খেলা-ধুলা নয় মাছ চাষ করা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক নিয়ম করে সকাল বিকাল ঐ মাছের খাবার নিজেই দিয়ে থাকেন। রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের স্বনামধন্য স্কুল হচ্ছে পপুলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্কুলটিতে ৭৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। ৪৪ বছর পুরাতন এ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা ১৪ জন।

চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী রয়েছেন ৪ জন। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিতে সভাপতি সহ ৪ জন সদস্য রয়েছেন। রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ক্লাস শুরুর পূর্বে বিদ্যালয়টির বারান্দায় ছাত্র-ছাত্রীদের কলকাকুলিতে ভরে ওঠেছে। এলাকার শত শত ছেলেমেয়েদের স্কুল সময়ে মুক্ত আবহাওয়া প্রাপ্তি, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, ক্রীড়া-বিনোদন জন্য বিশাল মাঠ থাকলেও তা পানিতে ভরপুর। হাটু পানিতে কিংবা তারও বেশী পানিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে।

পুরো মাঠটি এখন পানিতে টইটম্বুর করছে। মাঠের দু’ দিকে দু’টি পুকুরে যাতে মাছ বেরিয়ে না যায় সেজন্য বাঁধ এবং বাঁধের উপর দিয়ে নেটের জাল উল্টো মশারির মত করে স্থাপন করে রাখা হয়েছে। মাছের জন্য খাদ্য ব্যবহার করে পানি নষ্ট ও পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। মাঝে মধ্যে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের অনুষ্ঠান বিদ্যালয়ের বারান্দাটিতে কোন রকমে সেরে নেয়া হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষের ক্ষেত হিসাবে বিদ্যালয় মাঠ ব্যবহৃত হওয়ায় বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘিœত হওয়ার পাশাপাশি এলাকার খেলাধূলা ও মুক্ত অবকাশের জন্য ব্যবহৃত মাঠটি ব্যবহারের সুযোগ বঞ্চিত হয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ মনোকষ্টে রয়েছে।

রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে মাঠের পানি নিস্কাশনের জন্য সুব্যবস্থা থাকলে তাতে বাঁধ দিয়ে জলাবদ্ধতা করা হয়েছে। পানিতে মাঠতি তলিয়ে থাকে বিধায় মাঠটি মাছ চাষের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকাবাসী জানান ২/৪ দিন বৃষ্টি না থাকলে পার্শ্ববর্তী পুকুর ও খাল থেকে সেচের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করা হয়। মাছ চাষের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা যেমন মাঠ পরিস্কার সহ মাছের বিচরন রাখতে নিয়মিত মাঠটি পরিস্কার করা হয়। শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফেলে রেখে মাছ দেখতে এলে শিক্ষকদের হাতে প্রায়ই প্রহার হতে হয়। এতে বিদ্যালয়ের পড়াশোনা ব্যহতের পাশাপাশি শৃংখলা ব্যহত হচ্ছে। জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা চলতি দায়িত্ব মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান এ বিদ্যালয়টিতে মাছ চাষের বিষয়টি তার জানা নেই।

তার উর্ধ্বতন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানতে পারেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসনকে অফিসে না পেয়ে মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি। প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন জানান চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানির সাথে পার্শ্ববর্তী পুকুর থেকে দেশী কৈ মাছ বিদ্যালয়ের মাঠে উঠে আসে। এরপর ঐ মাছে ডিম ছাড়লে তা রক্ষনাবেক্ষন করা হচ্ছে। তিনি নিজেই এ কাজটি করছেন। বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি আনিছুর রহমান দুলাল জানান, গত দু’মাস পূর্বে এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পান।

তিনি বলেন মাঠটিতে হাজার হাজার কৈ মাছের পোনা বড় হচ্ছে। বিদ্যালয় কমিটি এগুলো খাবারের জন্য রাখেনি। মাছগুলো বড় হলে বিক্রিকৃত টাকা বিদ্যালয়ের কাজে খরচ করা হবে। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে সাক্ষাত হয় এডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য আঃ মান্নান সিকদারের সাথে। এ অভিভাবক সদস্যের ছেলে তন্ময় অস্টম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত, ছেলের রোল নম্বর জানতে চাইলে তিনি তা জানেন না বলে জানান।

ছেলের রোল নম্বরের প্রতি তার আগ্রহ না থাকলেও প্রধান শিক্ষককের সুরে সুর মিলিয়ে মাছ চাষে শিক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না বলে জানান তিনি। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা সোনালী কর্মকার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বিরক্তি প্রকাশ করে অপর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের রাগন্বিত কন্ঠে কক্ষে প্রবেশ করতে বলেন। তিনি জানান বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলা ধুলা করবে কি না তা দেখার দায়িত্ব শিক্ষকদের সাংবাদিকদের নয়।

সাংবাদিকদের দেখা মাত্র শিক্ষকরা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। যার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের বারান্দাতে দাড়াতেই দেননি শিক্ষকরা।দশম শ্রেনির শিক্ষার্থীরা ক্ষোভের সহিত অভিযোগ করেন আমরা কিছু দিনের মধ্যেই বিদ্যালয় ছেড়ে যেতে হবে অথচ প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করার পরেও মাঠটি খেলার উপযুক্ত করে দিতে পারেনি। বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত এক শিক্ষার্থী জানান, তারা বিগত দিনে মাঠে খেলা ধুলা করলেও এবার আর তা পারছেন না। একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা জানান, এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পৈত্রিক বাড়ি বিদ্যালয়েল নিকটবর্তী হওয়ায় গায়ের জোরে যা খুশী তা করে বেড়াচ্ছেন।

তারা জানান বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে প্রায়ই টাকা আদায় করে থাকেন। বনভোজনের নামে গরীব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের পাশাপাশি অহেতুক জরিমানা করে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। গত সপ্তাহে বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্র রাব্বি সহ সজল ও বাপ্পিকে বিদ্যালয়ের নষ্ট জানালা ভেঙ্গেছে এমন অভিযোগে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এ টাকা না দিলে তাদেরকে বিদ্যালয়ের আর পড়াশোনা করতে হবে না এমনটাই জানিয়ে দেয়া হয়। রাব্বির পিতা অটোরিক্সা চালক মোস্তফা জানান তিনি তার ছেলেকে আর এ বিদ্যালয়ে পড়াতে চান না। তিনি বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের অনুরোধ করেন তার ছেলেকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেয়ার জন্য। অপরাধ না করেই ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হচ্ছে ভবিষ্যতে কোন দোষ চাপিয়ে দিয়ে কি শাস্তি দেয় তাই ছেলেকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করাবেন।

অত্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খোকন তিনি জানান প্রধান শিক্ষককে আমি অনুরোধ করেছি যাতে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলা সহ শারীরিক শিক্ষা বিদ্যালয়ের মাঠে করতে পারে।

কিন্তু প্রধান শিক্ষকের আচরনে মনে হচ্ছে বিশেষ কারো ক্ষমতা বলে কাউকেই তিনি তোয়াক্কা করছেন না। এভাবে চলতে থাকলে বিদ্যালয়ের সুনাম দিন দিন হারিয়ে ফেলবে।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net