কাজে আসছে না বরিশাল নৌ-বন্দর এলাকায় করা কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিং। ড্রেজিং করার ৮ মাসের মধ্যে নৌযান চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে এই বন্দর। ফলে কীর্তনখোলা নদীতে ড্রেজিংয়ের নামে ফের শুরু হয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, শুকনো মৌসুমে ড্রেজিং করার পর বর্ষা, পাহাড়ি ঢলে ও নৌ-বন্দর এলাকায় স্রোত না থাকার কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, স্থায়ী সমাধান না করতে পারলে শীত মৌসুমে প্রতি বছরই ড্রেজিং করার জন্য কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে সরকারকে। জানা গেছে, বরিশাল নৌ-বন্দর এলাকার নাব্য স্বাভাবিক রাখতে গত জানুয়ারিতে কীর্তনখোলায় সোয়া লাখ ঘনমিটার পলি খনন করা হয়। ৮ মাসের ব্যবধানে বন্দরের পন্টুন এলাকায় নাব্য সংকটের কারণে ফের নদী খনন শুরু হয়েছে। কয়েকবছর ধরে শীত মৌসুমের শুরুতে যাত্রীবাহি লঞ্চের পন্টুন সংলগ্ন কীর্তনখোলায় লক্ষাধিক ঘনমিটার পলি খনন করা হচ্ছে। এতে প্রতিবারই ব্যয় হয় কোটি কোটি টাকা। তবে নাব্য সংকটের স্থায়ী কিংবা দীর্ঘ মেয়াদি সমাধান হচ্ছে না। নৌযান মালিক ও সংশ্লিষ্টরা বলেন, অপরিকল্পিত নদী খননের কারণেই এই সংকটের দীর্ঘ মেয়াদি সমাধান হচ্ছে না। খনন শেষে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে বন্দর এলাকার নাব্য আগের অবস্থাতে ফিরে যাচ্ছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ফের শুরু হওয়া ড্রেজিং নিয়েও সংশ্লিষ্টরা একই আশংকা করছেন। তারা বলছেন, বিআইডব্লিউটিএ’র উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তারা নাব্য সংকট জিইয়ে রেখে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার ড্রেজিং বাণিজ্য করছেন। তাদের বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য নদী খনন কার্যক্রমের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করা হয় না।
নৌ-বন্দরে বার্দিংকারী ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ মাস্টার শামিম হোসেন বলেন, ‘নদীর নাব্য নিয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়তে হয়। অথচ প্রতিবছর কীর্তনখোলায় ড্রেজিং করা হলেও আমাদের কোনো মতামত নেয়া হয়
না।’ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘ড্রেজিং বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খনন শুরুর আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তবে ড্রেজিং শেষে কতটুকু খনন করা হয়েছে এ বিষয়ে অবহিত না করেই চলে যায়। ফলে কতটুকু খনন করা হয় তা আমরা জানতে পারি না।’ সংস্থার বরিশাল জোনের সভাপতি আজিজুল হক আক্কাস বলেন, আগে নদী খননের জন্য স্থানীয় লঞ্চ মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিআইডব্লিউটিএ’র স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হতো। কিন্তু ৫ বছর ধরে কীর্তনখোলা খননের বিষয়ে কোনো কমিটি হচ্ছে না। ঢাকা থেকে ড্রেজিং বিভাগের লোকজন এসে খনন করে চলে যান। ফলে ৬ মাস পরে ফের নাব্য সংকটে পড়তে হয়। বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা যুগান্তরকে বলেন, ‘গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আমরা নৌ-বন্দর এলাকায় ড্রেজিং শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমরা ৪৭ হাজার ২৪৭ ঘনমিটার বালু কেটেছি। তবে বালু ফেলার জায়গা না পাওয়া নদীর মাঝে স্রোতে ফেলা হচ্ছে।’
তবে নৌযান মালিক ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ অস্বীকার করে ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল্লাহ জানান, বন্দর সংলগ্ন রসুলপুর চরের সঙ্গে স্রোতের আঘাত লাগায় পন্টুন এলাকায় পলি জমে প্রতিবছর নাব্য সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। শুরু হওয়ায় ড্রেজিং কার্যক্রমে পন্টুন সংলগ্ন কীর্তণখোলায় এক থেকে সোয়া লাখ ঘনমিটার পলি খনন করা হবে। প্রকৌশলী মো. শফিকুল্লাহ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া বরিশাল নদী বন্দরের নাব্য সংকটের স্থায়ী সমাধান হবে না। বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রতিবছরই নৌ-বন্দর এলাকায় ড্রেজিং করতে হবে। এর কারণ বন্যার পানিতে পলি চলে আসে। বন্দরের অপর পাড়ে নদী ভাঙছে। যার বালু এই পাড়ে এসে জমছে।
সূত্রঃ যুগান্তর
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply