মঙ্গলবার, ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৩:৪৭

শিরোনাম :
কথা দিচ্ছি আপনাদের সেবায় আমি সর্বদা পাশে থাকবো : চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম জাকির হোসেন উপজেলার উন্নয়নে আপনাদের পাশে আমি সর্বদা রয়েছি -ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিন মোটরসাইকেল প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা, আহত-২ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া কে এই জাকির হোসেন প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম যারা আমার জন্য কাজ করেছে আমি তাদের রেখে কখনো পালিয়ে যাইনি-এসএম জাকির হোসেন রেমিটেন্স আহরণে রূপালী ব্যাংকের ২ দিন ব্যাপী ক্যাম্পেইন সম্পন্ন সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে মশা দিয়ে কোটি টাকার দুর্নীতি!

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে মশা দিয়ে কোটি টাকার দুর্নীতি!

dynamic-sidebar

দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজন মিলে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার লোক হাসপাতালে অবস্থান করে।বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যে অপরিচ্ছন্ন হয় হাসপাতাল। সেই বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। আর এ বর্জ্যের কারণে হাসপাতাল ও এর আশপাশে থাকে মশার উপদ্রব।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, মশা নিধনের জন্য ওষুধ ছিটাতে নগর সংস্থা ও স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে ছয় মাসে একাধিকবার আবেদন জানালেও কোনো কাজ হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বারশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) গত ছয় মাসে মশার ওষুধ কেনেনি।বরিশালের বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি বিএম কলেজ। যেখানে ২৭ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। দিনের বেলায় কলেজের শ্রেণিকক্ষে মশার কয়েল জ্বালিয়ে পাঠদান করেন শিক্ষকরা। কারণ কলেজে মশার উপদ্রব এতই বেশি যে শ্রেণিকক্ষে বসা দায়।বিএম কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রায় এক বছর ধরে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে মশা নিধনের জন্য ওষুধ ছিটাতে অনুরোধ জানালেও কোনো কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে শ্রেণিকক্ষে কয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে।শুধু এ দুটি প্রতিষ্ঠানই নয়, বরিশাল নগরের সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ মানুষ। নগর সংস্থার কাছে আবেদন করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না।বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, মশার ওষুধ কেনা হচ্ছে না। এবার কোনো দরপত্রই আহ্বান করা হয়নি। কারণ ওষুধ কেনার অলিখিত দায়িত্ব নিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবীব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপম। এবারের বাজেটে মশার ওষুধের জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ওই টাকার বেশির ভাগই উত্তোলন করা হয়েছে। বাকি যে অর্থ রয়েছে তা দিয়ে নামমাত্র ওষুধ কেনা হবে। সেটাও আগামী বছরের প্রথম দিকে।নগরবাসীর অভিযোগ, বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছর মশার উপদ্রব বেশি। দিনের বেলায় উপদ্রব কিছুটা কম থাকলেও রাতের বেলায় অসহনীয় হয়ে ওঠে। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে চলন্ত গাড়িতেও মশার উৎপাত দিন দিন বাড়ছে। মশারি, কয়েল কিংবা ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়েও মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। পুকুর-ডোবা, নালা-নর্দমার কচুরিপানা ও ময়লা পরিষ্কার না করায় সেগুলো মশা ‘খামারে’ পরিণত হয়েছে।সাগরদী এলাকার বাসিন্দা ইমন শেখ বলেন, ‘আমাদের এলাকায় দুটি খাল রয়েছে। এসব খালের পানিতে ময়লা এবং আবর্জনা জমে আছে। সেখানে মশার কারখানা। কিন্তু দুই-তিন বছরের মধ্যে এক দিনের জন্যও মশার ওষুধ ছিটাতে কাউকে এলাকায় আসতে দেখিনি। এমনকি খাল পরিষ্কারের জন্যও কেউ আসে না। ’সরকারি বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক স্বপন কুমার পাল বলেন, ‘রাতের কথা কী বলব, দিনেও মশার যন্ত্রণায় কলেজে থাকা যায় না। ওষুধ স্প্রে করার পরও বসা যায় না কার্যালয়ে। কয়েল জ্বালালে তার ওপর মশা খেলা করে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য কর্মী আছে বলে শুনেছি, কিন্তু অধ্যক্ষর দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনো দিন তাদের দেখিনি। ’নগর সংস্থার পরিচ্ছন্নতা বিভাগের পরিদর্শক মো. ইউসুফ হোসেন বলেন, ‘পাঁচ মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় কোনো ওয়ার্ডেই মশা নিধন কর্মসূচি নেই। ওষুধ এলে তা ওয়ার্ডে
ছিটানো হবে। তবে ওই ওষুধ কবে আসবে তা কর্তৃপক্ষই ভালো জানেন। ’ইউসুফ হোসেনের দেওয়া তথ্য মতে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে মশা নিধনের জন্য পাঁচ লিটার ওষুধ বরাদ্দ দেওয়ার কথা। তবে অর্থ সংকটের কারণে আগে দুই-এক লিটার দেওয়া হতো। কিন্তু পাঁচ মাস ধরে তাও বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, মশা নিধন কর্মসূচির জন্য ফগার মেশিন রয়েছে পাঁচটি। আর তা পরিচালনার জন্য কর্মচারী রয়েছে সাতজন। হাসপাতাল আর বড় বড় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মশা নিধনে ওই মেশিনগুলো ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ছোট হ্যান্ড স্প্রে মেশিন রয়েছে ৬৭টি, যার ৬০টি নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের হেফাজতে রয়েছে। এগুলো দিয়ে সিটি করপোরেশনের ৬০ জন কর্মচারী ওষুধ ছিটায়।নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মজিবর রহমান বলেন, গত পাঁচ মাসে মশা নিধনের জন্য তাঁর ওয়ার্ডে কোনো ওষুধ ছিটানো হয়নি। তিনি ওই সময়ের মধ্যে বহুবার মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য নগর কর্তৃপক্ষকে বললেও কোনো লাভ হয়নি। নগর সংস্থার স্বাস্থ্য বিভাগ শুধু বলছে, ওষুধ নেই তাই দেওয়া সম্ভব নয়।ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ অগ্রাহ্য করলেও শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, পুলিশ কমিশনার কার্যালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ বেশ কিছু সরকারি দপ্তর তাঁর ওয়ার্ডে। মশা নিধনের জন্য তাঁকে প্রায়ই বলা হয়। কিন্তু নগর সংস্থা ওষুধ না ০কেনায় মশা নিধন সম্ভব হচ্ছে না।সিটি করপোরেশনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান টিপু বলেন, ‘ওষুধের সাপ্লাই নেই—এমনটি বলছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমান। তাই তা ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। ’ তবে মেয়রপুত্র কামরুল আহসান রুপমের ওষুধ কেনার দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।টিপুর দাবি, কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ না থাকায় কাউকে ওষুধ কেনার কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। মশার ওষুধও কেনা হচ্ছে না। সে কারণে মশা নিধন কর্মসূচিও বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছর মশা নিধন কর্মসুচির জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ২০ লাখ টাকা বেশি। প্রতিবছরই এভাবে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।বরিশাল সিটি কপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের অস্থায়ী দায়িত্বে থাকা পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা দীপক লাল মৃধা বলেন, ‘কিভাবে ওষুধ কেনা হয় সেটা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাই জানেন। তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাজগুলো আমিই দেখভাল করছি। কিন্তু ইন্টারনাল কোনো বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ’সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য দুই থেকে তিনজন করে কর্মী নিযুক্ত আছেন। তাঁরা দিনে দুবার ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন। স্বাস্থ্য বিভাগ তাঁকে এ রকমই জানিয়েছে। মশার ওষুধ বাবদ তারা বিলও উত্তোলন করে নিচ্ছে। কিন্তু মশা নিধনের যে ওষুধই ক্রয় করা হয়নি সে বিষয়টি আমার জানা নেই। ’ওষুধ কেনার জন্য কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রাধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘শুনেছি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। তবে সাড়া না পাওয়ায় কার্যাদেশ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজস্ব উপায়ে ওই ওষুধ কিনছেন।

 

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net