আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী রেখে ইভিএম বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমার প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সব কমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে তারা সবাই আগামী সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে এখন কমিশন বৈঠকে এটি উঠানো হয়নি। নির্বাচনে কি পরিসরে সেনা থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় বলে দিবে কি পদ্ধতিতে সেনাবাহিনী থাকবে। ম্যাজিস্টেটিক পাওয়ার থাকবে কি থাকবে না। তবে আমি বলব সংসদ নির্বাচনে সেনা থাকছেই।’
ইভিএম সম্পর্কে তিনি বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সহ অন্য সিটিতে সীমিত পরিসরে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম সীমিত আকারে ব্যবহার করা হলেও সংসদ নির্বাচনে এ মেশিন ব্যবহার করা সম্ভব নয় এত বড় নির্বাচনের ইভিএম ব্যবহারের জন্য কমিশন প্রস্তুত নয়। ইসির হাতে সময় কম।
নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, রংপুর সিটিতে পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। সামনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও এটা ব্যবহার করা হবে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না। ইসি সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদের রোডম্যাপে ইভিএম এর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ইসির কাছে পাল্টাপাল্টি প্রস্তাব এসেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
অপরদিকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বিএনপি বলেছে, জাতীয় নির্বাচনে কোনোভাবেই ইভিএম বা ডিভিএম পদ্ধতি বা এ জাতীয় কোনো যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। শুধু বিএনপি নয়। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। অপরদিকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পুরনো প্রায় এক হাজার ইভিএম অকেজো করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ইসি। এ লক্ষ্যে একটি কমিটিও কাজ করছে। আর নতুন করে ইভিএম তৈরির কাজও চলছে। সেগুলো ব্যবহার হবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটগ্রহণের কাজে সীমিত আকারে। ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা হবে প্রায় ৪০ হাজার। এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হলে প্রায় আড়াই লাখ ইভিএম প্রয়োজন হবে।
ভোটের আর বাকী আছে এক বছর। এত বিপুল পরিমাণ ইভিএম তৈরি কঠিন হবে। তাছাড়া এসব মেশিনের ওপর নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। সর্বোপরি ভোটারদের নতুন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভোটদানের উপযোগী করে তোলা প্রায় অসম্ভব। যেখানে ভোটাররা ব্যালটে ভোট দিতে অনেক ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভোট দিতে পারে না। ফলে অনেক ভোট নষ্ট হয়। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, ইভিএম ব্যবহারের দরজা বন্ধ হয়নি। স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে।
সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবের ওপর ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বিপুল পরিমাণ ইভিএম তৈরি, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও ভোটারদের সচেতনতা সৃষ্টির সক্ষমতা হয়েছে কিনা দেখতে হবে। ইসি সূত্র জানায়, এক-এগারোর ড. শামসুল হুদা কমিশনের কেনা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম অকেজো করার প্রক্রিয়া চলছে। সে সময় কেনা সব ইভিএম অকেজো-পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে। ইসি এই কাজটির জন্য আট সদস্যের একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করেছে।
তাদের দেওয়া সুপারিশের আলোকে এগুলো অকেজো করা হবে। এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের ইভিএম বাদ দিয়ে নতুন ইভিএমে আগামীতে নির্বাচন করার কথা ভাবছে ইসি। ইতোমধ্যে নতুন ইভিএমের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। ইসি সূত্র আরও জানায়, ২০১০ সালের দিকে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। আর চসিকের কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রথম উদ্ভাবিত ইভিএমে ভোট হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে বেশকিছু সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হয়। এসব নির্বাচনে ত্রুটি ধরা পড়ায় ওইসব ইভিএম অকেজো করার সিদ্ধান্ত হয়
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply