সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১২:২৪

শিরোনাম :
কথা দিচ্ছি আপনাদের সেবায় আমি সর্বদা পাশে থাকবো : চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম জাকির হোসেন উপজেলার উন্নয়নে আপনাদের পাশে আমি সর্বদা রয়েছি -ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিন মোটরসাইকেল প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা, আহত-২ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া কে এই জাকির হোসেন প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম যারা আমার জন্য কাজ করেছে আমি তাদের রেখে কখনো পালিয়ে যাইনি-এসএম জাকির হোসেন রেমিটেন্স আহরণে রূপালী ব্যাংকের ২ দিন ব্যাপী ক্যাম্পেইন সম্পন্ন সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ
২৭ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

২৭ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

dynamic-sidebar

ঢাকাঃ


পাঁচ দফা আল্টিমেটামের পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে শক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রশাসন। প্রথম পর্যায়ে ২৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। পদক্ষেপের মধ্যে থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখা, নতুন বিষয় ও অনুষদ অনুমোদন না দেয়া, ভিসি, প্রোভিসি ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রার নিয়োগের অনুমোদন বন্ধ রাখা। এছাড়া সমাবর্তন ও শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন না দেয়ারও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা সরকারের কাছে নিষ্কণ্টক জমি চান। এজন্য তারা শিক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রী তাদের সঙ্গে আর এ ব্যাপারে আলোচনায় বসতে বা সময় দিতে আগ্রহী নয়। মন্ত্রণালয় এখন সরকারের নির্দেশ অমান্যকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে।

নিজস্ব ও স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ অর্থাৎ পঞ্চম দফা আল্টিমেটাম শেষ হয়েছে গত ৩১ জানুয়ারি। ২০১০ সাল থেকে এই পর্যন্ত পাঁচ দফা আল্টিমেটামের মধ্যে রাজধানীর পুরনো ৩৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ১২টি ঢাকার আশপাশের এলাকায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাকি ২৭টি প্রতিষ্ঠান এখনও অস্থায়ী, অনুমোদনহীন ও ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগই নেয়নি। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত ২২ ফেব্রুয়ারি একটি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মের মধ্যে আসতে পারেনি, তাদের আর চলতে দেয়া হবে না। তাদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা মুনাফার লক্ষ্য নিয়ে চলতে চান, যারা নিজস্ব ক্যাম্পাসে এখনও যাননি, যারা একাধিক ক্যাম্পাসে পাঠদান পরিচালনা করছেন তারা আইন অনুসারে সঠিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে না পারলে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির মহাসচিব ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অন্যতম উদ্যোক্তা বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা বলছি না যে, আমরা আইনের ঊধর্ে্ব। কিন্তু এখন সরকার থেকে বলা হচ্ছে- যারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেয়া হবে। এতে ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে তাদের কী হবে? এজন্য আমরা মনে করি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিন্ধান্ত গ্রহণের আগে বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোক্তা, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় মিলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের বিষয়ে ইউজিসি’র সঙ্গে আমরা বহুবার বৈঠক করেছি। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও সভা হয়েছে। তারা আইন-কানুন মেনে সাত বছরের মধ্যে ক্যাম্পাস নির্মাণের কথা বলেছেন। আমরাও বাস্তব অবস্থা তুলে ধরে বলেছি- আমরা আইন অনুযায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে চাই। কিন্তু ঢাকা ও এর আশপাশে নিষ্কণ্টক জমি পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার থেকেও এ বিষয়ে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রাস্টিরা (উদ্যোক্তা) ডোনেশন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। ডোনেশন দিয়ে তো স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ সম্ভব নয়।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা অবগত কিন্তু এ অজুহাতে বছরের পর বছর ভাড়া বাড়িতে ক্যাম্পাস চালানো যাবে না।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা আইন মেনে ভালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন, তাদের আমরা নানাভাবে সহযোগিতা করছি। আর আইন না মানার কারণে দারুল ইহুসানসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছি। কাজেই যারা আইন মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবই।’

স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল কাজ-মন্তব্য করে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সবাই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে চায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বন্ধক দিয়ে ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এজন্য আমরা মনে করি সরকার লোন (ঋণ) নেয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিক, অথবা সরকারি মূল্যে আমাদের নিষ্কণ্টক জমি দেয়া হোক।’

১৯৯২ সালে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এর প্রায় ১৮ বছর পর সরকার ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ প্রণয়ন করে। আইন ও প্রতিষ্ঠানকালীন শর্তানুযায়ী সাত বছরের মধ্যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি স্থানান্তরের কথা। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই ওই শর্ত লঙ্ঘন করেছে। করছে সনদ বিক্রি। তছরুপ করছে প্রতিষ্ঠানের তহবিলের টাকা-পয়সা। কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় বাড়ি ও গাড়ি কিনে নিজেরা বিলাসিতা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি, শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। নতুন ও পুরনো মিলে বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৯৫টি এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৪০টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় এক হাজার ৬৩২ বিদেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। নতুন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেতে আরও শতাধিক আবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা রয়েছে।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের আল্টিমেটাম অনুসারে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে না বা ক্যাম্পাসে যেতে আগ্রহী নয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল, লিডিং, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অব সায়েন্সেস, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি।

আর ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে সময়ক্ষেপণ করছে। এই ১০ প্রতিষ্ঠান হলো- গ্রীন, সাউদার্ন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, দি পিপলস, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল, ইস্টার্ন, বাংলাদেশ ইসলামী, ওয়ার্ল্ড, ইস্ট ডেল্টা এবং আশা ইউনিভার্সিটি।

এছাড়া জমি কিনলেও ক্যাম্পাস নির্মাণে গড়িমসি করছে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো- স্টেট, ভিক্টোরিয়া, মানারাত, প্রাইম এশিয়া, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, মেট্রোপলিটন, সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটি।

‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ কার্যকরের আগে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৫৪টি। এর মধ্যে সনদ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। দেশব্যাপী সনদ বাণিজ্যের দায়ে সম্প্রতি বহুল বিতর্কিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ও সবর্োচ্চ আদালতের রায়ে বন্ধ হয়ে যায়।

আইনে বলা হয়েছে, ‘এই আইনে যাই থাকুক না কেন এই আইন কার্যকর হওয়ার পূর্বে সাময়িক অনুমতিপ্রাপ্ত কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে সনদ গ্রহণপূর্বক স্থায়ী না হয়ে থাকলে এই আইন কার্যকর হওয়ার পর উক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধারা ৯ এর শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে সনদপত্র গ্রহণ করিতে হইবে। কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদপত্র গ্রহণ না করলে উক্ত সময়সীমার পর সরকার উক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতি বাতিল করে তা বন্ধ করবে।’

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net