বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) কলেজছাত্রী সাদিয়া আক্তারকে (২১) গণধর্ষণের পর হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলামের (২৪) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শনিবার (০৯ ডিসেম্বর) রাত দেড়টার দিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
সেখানকার চিকিৎসকরা বলছেন- নির্যাতনে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া এই যুবকের শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে।
ফলে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে তাহলে কী পুলিশের নির্যাতনে কলেজছাত্রীর খুনি সিরাজুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে?
তবে পুলিশও এই বিষয়ে এড়িয়ে গিয়ে বলছে- হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সিরাজুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। যে কারণে পুলিশ ডাক্তারদের দ্বিমুখী বক্তাব্যে বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
এতাবস্থায় শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মুস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন- গত ৮ ডিসেম্বর রাত ৮টা ১০ মিনিটে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে অসুস্থ অবস্থায় তাকে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ১০ ডিসেম্বর রাত ১টা ৩০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর প্রমাণপত্রে ‘ফিজিক্যাল অ্যাসাল্ট’ (শারীরিক জখম) শব্দটি উল্লেখ রয়েছে।
অবশ্য শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. তারেকও বলছেন- হাসপাতালে ভর্তির সময় রোগীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়া কি কারণে মৃত্যু হয়েছে নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- গত ৩ ডিসেম্বর সিরাজুল ইসলামকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একদিন পর ৪ ডিসেম্বর বরিশাল নিয়ে আসা হয়। এবং ৫ ডিসেম্বর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
ওই দিন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতে প্রদানের পর সিরাজকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এরপর ৮ ডিসেম্বর অসুস্থ অবস্থায় কারা কর্তৃপক্ষ বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি করলে শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. বদরুজদৌজা বরিশালটাইমসকে জানান, আসামি সিরাজুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর সময় তার শরীরে জখম ছিল। অবস্থার অবনতি হলে সিরাজকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তবে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আওলাদ হোসেন বরিশালটাইমসকে জানান, সুস্থ অবস্থায় আসামি সিরাজকে কারাগারে পাঠানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে- হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে গত ২২ নভেম্বর বরিশাল নগরীর ডেফুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আলমগীর খানের মেয়ে সাদিয়া আক্তার বাসা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে আর বাসায় ফিরেনি।
ওই দিনই বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি করেন তার বাবা আলমগীর খান। এরপর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার ১৩ দিন পর ৩ ডিসেম্বর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থেকে মো. সিরাজুল ইসলাম (২৪) এবং মো. হাফিজ আকন (১৫) নামের দু’জনকে গ্রেফতার করে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন শিক্ষার্থী সাদিয়ার সঙ্গে মোবাইলে প্রেমের অভিনয় করেন। এরপর বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের আব্দুর রব হাওলাদারের ছেলে নাজমুল ইসলাম নয়নের (৩০) সহায়তায় সাদিয়াকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া এলাকার ডেকে নিয়ে ৩ জন মিলে গণধর্ষণ করে। ওই সময় সাদিয়া চিৎকার করলে গলাটিপে হত্যা করে বলেশ্বর নদীতে মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
তবে এখন পর্যন্ত সাদিয়ার মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে সাদিয়ার বাবা আলমগীর খান বাদী হয়ে মামলা করেন।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply