ঢাকা নিউ মার্কেট ভবনকে দোতলা করিবার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত সোমবার সড়ক অবরোধ করিয়া বিক্ষোভ করিয়াছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতি। ওইদিন দুপুর সাড়ে বারোটা হইতে নিউ মার্কেট দক্ষিণ দিকের এক নম্বর গেটের সম্মুখে ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করিয়া বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। ইহাতে নীলক্ষেত মোড় হইতে বিডিআর গেট অবধি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হইয়া যায়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। এই সময় সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান ও বক্তব্য প্রদান করেন বিক্ষোভকারীরা। নিউ মার্কেট থানা পুলিশের পাশাপাশি দাঙ্গা দমন বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ আসিয়া চেষ্টা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় একজন সংসদ সদস্যের আশ্বাসের পর প্রত্যাহার করা হয় সড়ক অবরোধ। জানা যায়, অতি সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিউ মার্কেটের বর্তমান একতলা ভবনকে দোতলা করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সিটি করপোরেশন। ইহার পর হইতে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করিয়া আসিতেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা মনে করিতেছেন, ওই ভবন দোতলা করা হইলে নষ্ট হইবে তাহাদের ব্যবসার পরিবেশ।
বলিবার অপেক্ষা রাখে না, ‘যানজট’ শব্দটি রাজধানীতে এক আতঙ্কের নাম। রাজধানী ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লক্ষ কর্মঘণ্টার অপচয় ঘটে। আর বত্সরে যেই আর্থিক ক্ষতি হয়, তাহার পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এমন তথ্য জানাইয়াছে বিশ্বব্যাংক। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই ঢাকার দুর্বিষহ যানজট একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু কোথাও কোনো সড়ক অবরোধ বা বিক্ষোভ কিংবা সভা-সমাবেশ থাকিলে সেই দিন ঢাকা মহানগর দীর্ঘ সময়ের জন্য অচল হইয়া পড়ে। সম্প্রতি জানুয়ারির প্রথম ভাগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কর্মদিবসে রাজপথে শোভাযাত্রা না করিয়া রাজধানীতে যানজট নিরসনে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছে। তাহারা ৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে ৬ জানুয়ারি শনিবার তাহাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এই প্রেক্ষাপটে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ঢাকা শহরে কর্মদিবসে সকল প্রকার শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করিবার প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি এই ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরির উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর এই প্রস্তাব নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সভা-সমাবেশ মিছিল-মিটিং ইত্যাকার বিবিধ জনসংযোগের পাশাপাশি কোনো ব্যাপারে প্রতিবাদের জন্য কর্মদিবসে ঢাকার রাজপথ বাছিয়া লইবার মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। অবরোধ এবং বিক্ষোভের ক্ষেত্রে আন্দোলনকারীদের দাবি যৌক্তিক না কি অযৌক্তিক—তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু জনজীবনকে স্থবির করিয়া সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলিবার মধ্যে সুস্থ মানসিকতার পরিচয় নাই। সময় আসিয়াছে এই পথ, এই বোধ পরিত্যাগ করিবার। যেকোনো ধরনের আন্দোলন বা বিক্ষোভ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সময় আসিয়াছে বিকল্প কিছু ভাবিবার।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply