দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার যে সাজাই হবে, সেটি বিএনপি নেতারা কীভাবে জানলেন সে প্রশ্ন রেখেছেন ওবায়দুল কাদের।
রায় আগেই লেখা, প্রহসনের বিচার দরকার ছিল না-বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন মন্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এই প্রশ্ন রাখেন।
কাদের বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, এই মামলায় আদালত বেগম জিয়াকে সাজা দেবেন এরকম নিশ্চয়তা তাকে (মির্জা ফখরুল) কে দিল? এবং সেটা তিনি আগেভাগে কী করে জানলেন?’।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হবে রায়। এই মামলায় সাজা হতে পারে বলে আদালতেই শঙ্কার কথা বলেছেন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার বিকালে রায়ের তারিখ ঘোষণার পর বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, খালেদা জিয়ার সাজা হলে দেশে আগুন জ্বলবে।
আর সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অবৈধ সরকার পূর্বেই রায় লিখে রেখেছেন। তবে এই বিচারের প্রহসনের কোনও প্রয়োজন ছিল না। দেশে যে আইনের শাসন নেই-ন্যায় বিচার সুদুর পরাহত সেটাই প্রমাণিত হলো। বিচার হবে প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই।’
একই দিন সন্ধ্যায় ফার্মগেট খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিটিউট মিলনায়তনে প্রতিক্রিয়া দেন ওবায়দুল কাদের। প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ২০১৮ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ গিয়েছিলেন তিনি।
মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, ‘আদালত নির্দোষ করতে পারে, আবার সাজাও দিতে পারে। এখানে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ নেই। সরকার এই পর্যন্ত বিচার বিভাগে কোন হস্তক্ষেপ করেনি।’
‘বারবার মির্জা ফখরুল বলার চেষ্টা করছেন যেন শেখ হাসিনা এই মামলাটা করে বেগম জিয়াকে হেনস্তা করছে? তাদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এটা একটা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিএনপি।’
কাদের বলেন, ‘এই মামলাটি কখন ফাইল হয়েছে? দুদক যখন মামলা তখন ফখরুদ্দিন মইনুদ্দীনের সরকার। …মামলা দিয়েছে বেগম জিয়া যাদেরকে বসিয়েছিলেন। ফখরুদ্দিন সাহেবও তাদের সৃষ্টি, মইনুদ্দিন সাহেবও তাদের দৃষ্টি।’
‘এখন দুদকের মামলা সরকার কীভাবে হস্তক্ষেপ করে? বেগম জিয়া নির্দোষ হলে আমাদের তো কোন অসুবিধা নেই।’
‘আর তিনি (খালেদা জিয়া) সাজা পেলে আমরা কীভাবে রক্ষা করব? শেখ হাসিনা সরকারের এখানে কি?’।
খালেদা জিয়ার সাজা হলে আগুন জ্বালানোর বিষয়ে বিএনপি নেতা রিজভীর বক্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, ‘তাহলে কি আদালত রায় দিতে পারবে না? আদালত এদেশে বিচার করতে পারবে না?’।
‘এখন আদালতের রায় মনমত না হলে আবারো তারা সেই সন্ত্রাস শুরু করবে কি?- এমন প্রশ্ন রেখে কাদের বলেন, ‘সেটা যদি করে আমি বলতে চাই বাংলাদেশের সচেতন জনগণ এবরি প্রতিহত করবে, প্রতিরোধ করবে।’
মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘এই সরকার বেগম জিয়াকে ভয় পায়। আর ভয় পায় বলেই তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়।’
এর জবাবে কাদের বলেন, ‘বেগম জিয়াকে আমরা ভয় পাই না। আমরা ভয় পাই ২০১৩, ১৪ সালের পেট্রোল বোমাকে। ভয় পায় দেশের মানুষ। তখন দেশে মানুষ তার (খালেদার) নির্দেশে কত যে মানুষের প্রাণের প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে।’
‘তারা রাস্তার হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছে। গাছ কি আওয়ামী লীগ করে? বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছে। রাস্তা কেটে ফেলেছে। বেগম জিয়ার এই রাজনীতিকে আমরা ভয় পাই। কিন্তু বেগম জিয়াকে আমরা ভয় পাই না।’
খালেদা জিয়া ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর টেলিফোন সংলাপের কথা তুলে ধরে কাদের বলেন, ‘মনে নেই চট্টগ্রামের একজনকে কীভাবে নির্দেশ দিয়েছে সন্ত্রাস করার জন্য? পেট্রল নিক্ষেপের জন্য। আমরা এটাকে ভয় পাই। বেগম জিয়াকে আমরা ভয় পাই না। তিনি ইতিবাচক রাজনীতি করলে আমরা কেন বাধা দেবো?’
বিএনপি রাস্তায় নেমে ‘আগুন সন্ত্রাস’ করলে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারিও দেন কাদের।
সরকার বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়-মির্জা ফখরুলের এই অভিযোগের জবাবে কাদের বলেন, ‘বিএনপি আসুক, তারা একটা বড় দল, আমরা এটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন চাই।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাকসুদুল হাছান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সংসদ সদস্য মীর শওকত আলী বাদশা।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply