রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের হিমঘরের সব ফ্রিজ বিকল হইয়া পড়িয়াছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরিয়া বিকল থাকিবার কারণে পচন ধরিয়াছে ফ্রিজে রাখা দশটি মৃতদেহে। হিমঘরের একজন কর্মচারীর বয়ানে জানা যায়, ১০ জানুয়ারি রমেক হাসপাতালের হিমঘরের তিনটি ফ্রিজ বিকল হইয়া যায়। এইসকল ফ্রিজে নারীর চারটি ও পুরুষের ছয়টি মৃতদেহ রাখা ছিল। ফ্রিজ বিকল হইয়া পচন ধরিবার কারণে এখন অন্তত পাঁচটি মৃতদেহ শনাক্ত করা সম্ভবপর হইতেছে না। লাশগুলি ফ্রিজ হইতে বাহির করিয়া হিমঘরের মেঝেতে রাখিবার ফলে দুর্গন্ধ ছড়াইয়া পড়িয়াছে হাসপাতাল জুড়িয়া। হিমঘরের কর্তব্যরত ডোম জানাইয়াছেন, দীর্ঘদিন ধরিয়া রাখা মৃতদেহগুলি এখন কঙ্কালে পরিণত হইয়াছে। অন্যদিকে, অপেক্ষাকৃত নূতন লাশগুলি পচিয়া দুর্গন্ধ ছড়াইতেছে। জানা যায়, ১০টি লাশের মধ্যে মামলা-সংক্রান্ত কারণে এক নারীর লাশ চার বত্সর ধরিয়া এবং স্বজনরা লাশ শনাক্ত করিতে না পারিবার কারণে তিনটি লাশ তিন বত্সর ধরিয়া হিমঘরের ফ্রিজে পড়িয়া রহিয়াছে।
একটি হাসপাতালের হিমঘরের প্রধান ভূমিকা হইল লাশ অবিকৃত রাখিয়া সংরক্ষণ করা। মামলা, অজ্ঞাতনামা কিংবা নূতন কোনো তদন্তের প্রয়োজনে হিমঘরের লাশগুলি অবিকৃত রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। তাহার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হয়, তাহাই করিবার নিয়ম। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ কিংবা নিয়মিত ফ্রিজের রক্ষণাবেক্ষণ করিবার ব্যবস্থা এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরের এই ফ্রিজগুলির মেয়াদ নাকি অনেক আগেই শেষ হইয়া গিয়াছে! অতঃপর বেশ কয়েকবার মেরামত করা হইলেও কিছুদিন পর পরই পুনরায় বিকল হইবার ঘটনা ঘটিতেছে। সর্বশেষ গত বত্সর জুলাই মাসে লাশঘরের ফ্রিজগুলি বেশ কিছুদিন বিকল হইয়া ছিল। সেই সময় অনেক তদবিরের পর সেইগুলি পুনরায় সচল করা হয়। অতঃপর ১০ জানুয়ারি আবারো বিকল হইয়া যায় ফ্রিজগুলি।
আসলে বিকল হইয়া যাওয়াটাই দস্তুর। কারণ ফ্রিজগুলি ইতোমধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ এবং মেরামত করা। এখন প্রশ্ন হইল, জুলাই হইতে জানুয়ারি—এই ছয়টি মাস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন ফ্রিজের সমস্যার টেকসই সমাধানের চেষ্টা করিলেন না? ছয় মাস তো কম সময় নহে। তাহারা অজুহাত হিসাবে বলিতে পারেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রহিয়াছে। কিন্তু তাহারা নিজেরাও কি কথিত আমলাতান্ত্রিক জটের কুশীলবের ভূমিকা পালন করিতেছেন না? একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ একটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। হাসপাতালের হিমঘর অত্যন্ত নাজুক, কারণ তাহা বিগড়াইয়া গেলে মৃতদেহ নষ্ট হইবার পাশাপাশি এতদিনের সকল সংরক্ষিত নমুনাই নষ্ট হইয়া যায়। সুতরাং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আরো পূর্বেই টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল। একদফায় তাহারা শিক্ষা গ্রহণ করেন নাই, এইবার বিকল হইবার পর ভুলের পুনরাবৃত্তি কাম্য নহে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply