পানি ব্যতীত জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। সুস্থ শরীরের জন্য জীবাণুমুক্ত সুপেয় পানি পানের কোনো বিকল্প নাই। বিশুদ্ধ পানি যেমন জীবনকে সজীব রাখে, তেমনি দূষিত পানি হইয়া ওঠে প্রাণঘাতী। বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা পাইতে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ আজকাল নির্ভর করিতেছেন জার ও বোতলজাত পানির উপর। অথচ সেই জার বা বোতলজাত পানিতেই দেখা মিলিতেছে মারাত্মক ক্ষতিকর জীবাণুর! সমপ্রতি ইত্তেফাকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, জীবাণুযুক্ত ও মানহীন জারের পানিতে সয়লাব হইয়া গিয়াছে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকা। দেদারসে ৪০ হইতে ৫০ টাকায় বিক্রয় হইতেছে এইসব দূষিত পানির জার। কয়েকদিন পূর্বে বিএসটিআই পরিচালিত একটি অভিযানে জারের পানি উত্পাদনকারী ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন পাওয়া গিয়াছে কেবল ৫টি প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু সেই ৫টি প্রতিষ্ঠানেরও পানি পরিশোধিত হইতেছে না সঠিকভাবে। বাকি অননুমোদিত ৫০টি প্রতিষ্ঠানের পানির মানের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) একদল গবেষক জানাইয়াছেন, রাজধানীর বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে সরবরাহ করা ৯৭ শতাংশ জারের পানিতে ক্ষতিকর মাত্রায় মানুষ ও প্রাণীর মলের জীবাণু কলিফর্ম রহিয়াছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩৫টি ব্র্যান্ডের সরবরাহ করা বোতলজাত ও জারে ভরা পানির ২৫০টি নমুনা সংগ্রহ করিয়া গবেষকরা দেখিয়াছেন, সংগ্রহকৃত নমুনাসমূহে বিপজ্জনক মাত্রায় বিদ্যমান রহিয়াছে টোটাল ও ফেকাল কলিফর্ম জীবাণু। টোটাল কলিফর্ম পরিমাপে পানিতে প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান এবং মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর অন্ত্রে উপস্থিত অণুজীব ও মলমূত্র দ্বারা দূষণের সম্মিলিত মান পাওয়া যায়। আর ফেকাল কলিফর্ম মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর অন্ত্র ও মলমূত্রের দ্বারা দূষণের মাত্রাকে নির্দেশ করে। গবেষকরা দেখিতেছেন, পানিতে টোটাল কলিফর্ম ও ফেকাল কলিফর্মের পরিমাণ শূন্য থাকিবার কথা থাকিলেও ৯৭ শতাংশ জারের পানিতে দুইটিরই উপস্থিতি রহিয়াছে অত্যন্ত বিপজ্জনক মাত্রায়। তাহা ছাড়া, স্ট্যান্ডার্ড মান অনুযায়ী পানিতে নাইট্রেট, লিড, ক্রোমিয়াম ও আয়রন থাকিবে না। কিন্তু নমুনা জারের পানিতে এইসবেরও দেখা মিলিয়াছে। সংশ্লিষ্ট গবেষকরা মনে করেন, স্যুয়ারেজ লাইনে ছিদ্রসহ বিভিন্নভাবে ওয়াসার পানিতে মলমূত্রের জীবাণু মিশিয়া থাকে। আর সেই পানিই নামমাত্র শোধন করিয়া বা শোধন ছাড়াই জারে ভরিয়া বা বোতলজাত করিয়া বিক্রয় করা হইতেছে।
বলিবার অপেক্ষা রাখে না যে, বিএসটিআই মান নির্ধারণ করিয়া দিলেও কার্যকর নিয়ন্ত্রণের অভাবে অবাধে বাজারে প্রবেশ করিতে পারিতেছে এইসব অপরিশোধিত পানির জার। সুতরাং নাগরিক স্বাস্থ্যরক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যেকোনো মূল্যে বন্ধ করিতে হইবে দূষিত পানির এই রমরমা বাণিজ্য।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply