কলাপাড়া প্রতিবেদক ॥ কর্দমাক্ত রাস্তা, ঝুঁকিপূর্ণ খেয়া পার হয়ে প্রবল বর্ষা উপেক্ষা করে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলেও শিক্ষক না থাকায় ক্লাস না করেই তাদের ফিরে যেতে হয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুধবার এ ঘটনা ঘটেছে। এতে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে অভিভাবকরা। তাদের অভিযোগ শিক্ষকরা যদি স্কুলেই না আসে তাহলে এই দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে পাঠিয়ে কি হবে।
উপজেলার আলোচিত এ বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক দিয়ে বছরের প্রথম থেকে ক্লাস চললেও শিক্ষা অফিস থেকে একমাত্র শিক্ষক মো. আবুল কাসেম কে ১২ দিনের আই সি টি প্রশিক্ষণে পাঠানোর কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কোন তদারকি ও বিকল্প শিক্ষক পদায়ন না করে বিদ্যালয়ের একমাত্র নিয়মিত শিক্ষককে প্রশিক্ষণে পাঠানোকে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ভুল বলে মন্তব্য করেছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা।
একাধিক অভিভাবক জানান, আজ (বুধবার) সকাল ১১টা পর্যন্ত ছিলো স্কুল তালাবদ্ধ। সোয়া ১১টার পর স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দিন মোল্লা তালাবদ্ধ স্কুলের অফিস কক্ষ খুলে বসেন। কিন্তু প্রবল বর্ষার মধ্যে ক্লাস রুম তালাবদ্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ছিলো স্কুলের বাইরে। তখনও কোন শিক্ষক আসে নি। বেলা সাড়ে ১২টার পর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সব ছাত্র-ছাত্রীকে ছুটি দিয়ে বিদ্যালয়ে তালাবদ্ধ করে চলে যায়। সরকারি কোন ছুটি না থাকলেও শুধু শিক্ষা অফিস ও শিক্ষকদের ভুলে বৃহস্পতিবার এ বিদ্যালয়ে কোন পাঠদান হয়নি।
জানাযায়, ১৫৫জন শিক্ষার্থী এ বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করলেও নিয়মিত ক্লাস করছেন এক শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন বরখাস্ত। সহকারি শিক্ষক জহিরুল ইসলাম জানুয়ারি থেকে পটুয়াখালী পিটিআইতে। অপরা শিক্ষক আরিফুর রহমানের বেতন বন্ধ থাকায় সেও স্কুলে অনিয়মিত। একমাত্র শিক্ষক মো. আবুল কাসেম বছরের প্রথম দিন থেকে বিদ্যালয়ে একাই নিয়মিত ক্লাস করলেও বুধবার সে ১২ দিনের প্রশিক্ষণে যাওয়ায় গোটা স্কুলে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়।
একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলে ক্লাস হবে না আগে জানিয়ে দিলে তাদের কষ্ট করে দুই-তিন মাইল দূর থেকে বৃষ্টিতে ভিজে আসতে হতো না। আর এই স্কুলে এমনিতেই ক্লাস হয়না। শুধু রোল ডেকে বাসায় পড়া দিয়ে ছুটি দিয়ে দেয়। তাদের বইয়ের প্রথম অধ্যায়ও এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। কেন ক্লাসে পড়ায় না জানতে চাইলে জানায়, স্কুলে তো স্যার নাই। একজন স্যার। অন্য এক স্যার মাঝে মাঝে আসে। ঠিকমতো ক্লাসই হয় না।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দিন মোল্লা জানান, তিনি ভেবেছিলেন এক শিক্ষক প্রশিক্ষণে গেলেও অপর শিক্ষক আসবেন। এজন্য বিদ্যালয় খুলে বসেছিলেন। কিন্তু তিনিও না আসায় সব শিক্ষার্থীকে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। আর আজ থেকে স্কুল সরকারি ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। স্কুল খুলবে জুন মাসের ১৯ তারিখ। তাই হয়তো অন্য শিক্ষক আসেনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) মো. আবুল বাসার জানান, ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে আইসিটি প্রশিক্ষণে পাঠানো হলেও অন্য শিক্ষকের ক্লাস করার কথা। কিন্তু সে যদি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আজ (বুধবার) যে বিদ্যালয়ে ক্লাস হয়নি বিষয়টি জানেন না। তাকে কেউ অবহিত করেণি। বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নিবেন এবং ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদায়নের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply