অনলাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারলে প্রত্যেক বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।
রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) ‘চিকিৎসক সম্মেলন-২০১৮’তে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন। খবর বাসসের
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার উপজেলা পর্যায়ে বহুতল আবাসন সুবিধা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের সুবিধার জন্য এবং তাদের শহরমুখিতা প্রতিরোধেই এটা করা হচ্ছে। এসব ফ্লাটে তারা (চিকিৎসকরা) ভাড়া থাকার সুযোগ পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবাটা নিশ্চিত করা সরকার হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্বও কর্তব্য বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, সেজন্য বিশেষায়িত চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান, নার্সিং থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে আমাদের প্রশিক্ষণ প্রদান একান্তভাবে প্রয়োজন। তার জন্য আমরা যেমন ইনস্টিটিউশনগুলোও করে দিয়েছি তেমনিভাবে চিকিৎসার সুযোগটাও আরো ব্যাপকভাবে সৃষ্টি করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে যেমন প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে তেমনি বিদেশি প্রশিক্ষক এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার ওপরও আমরা জোর দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার অনুরোধ থাকবে চিকিৎসক ভাই বোনদের কাছে- মানুষের সেবা করাটা কিন্তু সর্বপ্রথম কর্তব্য। কিন্তু এ প্রসঙ্গে একটা দুঃখের কথা আমি বলতে চাই। সেটা হলো, উপজেলা হাসপাতালগুলিকে উন্নতমানের করার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি, যেখানে আমাদের ৫০ বেডের একটি হাসপাতালে কমপক্ষে ১০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন, সেখানে কোথাও একজন কোথাও কোথাও খুব বেশি হলে ৪ জন ডাক্তার রয়েছেন। সেখানে কিন্তু ডাক্তার থাকেন না। মানুষ তাহলে সেবা পাবে কিভাবে। এটা আমার পশ্ন।
তিনি বলেন, পদ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি কিন্তু এখানে আমরা ডাক্তার পাইনা, নিয়োগও আমরা দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু কেন এই অবহেলা, মানুষের প্রতি। এটা নিশ্চয়ই জনগণ প্রত্যাশা করে না। সেটা আমি আপনাদেরকে ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করবো।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালিক এবং কনফেডারেশন অব মেডিকেল এসেসিয়েশন অব এশিয়া এন্ড ওশেনিয়া অঞ্চলের সভাপতি ডা. রবীন্দ্রান আর নাইডু অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) সভাপতি ড. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এবং বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী বিএমএ মহাসচিবকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা এবং সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করে চিকিৎসক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। পরে তিনি শান্তির প্রতীক পায়রা ওড়ান। প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে স্মরণিকারও মোড়ক উন্মোচন করেন।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ১১১টি। যার মধ্যে সরকারি ৪২টি এবং বেসরকারি ৬৯টি।
তিনি বলেন, তার সরকার প্রতিটি জেলায় ১টি করে মেডিকেল কলেজ তৈরি করতে চায়। যাতে করে নতুন চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি জেলার জনগণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুযোগ পান। রাজশাহী ও চট্টগ্রামে নতুন দু’টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার জন্য উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সিলেটে আরও একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।
সরকারি ও বেসরকারি মিলে ২৮টি ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড রিহ্যাবিলেশনের (নিটোর) শয্যা সংখ্যা ৫০০ থেকে উন্নীত করে ১ হাজার করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৮৪৬ জন চিকিৎসক, ৫ হাজারেরও বেশি নতুন নার্স নিয়োগ দিয়েছে। স্পেশাল বিসিএস এর মাধ্যমে আরও ৬ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পথে। স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়েই তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে ভ্যাক্সিন এন্ড ইমুনাইজেশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি।
তিনি বলেন, আমরা ২০১১ সালে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন করি। ‘জাতীয় ঔষধনীতি, ২০১৬’ ‘মানব দেহে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ২০১৮’- সহ নানাবিধ আইন কাঠামো প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট হয়ে গেছে, আমরা সারাদেশে ইন্টারনেট সুবিধা চালু করে দিয়েছি, প্রায় ৯৯ ভাগ জেলায় ব্রডব্যান্ড ইতোমধ্যে চালু হয়েছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাকে আমরা হাতে নিয়েছি সেই চিন্তা থেকে যে- জনগণের সেবা করাটা আমার কর্তব্য, জনসেবাটা আমার দায়িত্ব। কারণ এটা আমি সবসময় স্মরণ করি এই দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই ছিল তার একমাত্র চিন্তা।
প্রধানমন্ত্রী অটিজম বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখার জন্য তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনেরও এ সময় ভূয়শী প্রশংসা করেন।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply