মজিবর রহমান নাহিদ ॥ গত কয়েকদিন পূর্বে রাজধানী ঢাকায় দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি অনলাইন পত্রিকার কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাংবাদিকরা অংশ নেয়। আমি বরিশাল জেলা থেকে অংশ নিয়েছিলাম। সেই কর্মশালায় এমন সাংবাদিকরা অংশ নিয়েছিলেন যাদের সাংবাদিকতার বয়স ২০ থেকে ৪০ বছর। অনেকেই ছিলেন তাদের মফস্বলের গুণী সাংবাদিক। সেখানে জুনিয়র হিসেবে প্রায় সবার সাথেই একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। সবাই সাংবাদিকতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপচারিতা করেছিলেন। সেখানে একজন সিনিয়র সাংবাদিকের কিছু কথা আমি পুরো হতভম্ব হয়েছিলাম। তিনি প্রায় চোখের পানি ছাড়া অবস্থায় কথাগুলো বলেছিলেন। সিনিয়র ঐ সহকর্মী বলেছিলেন, একদিন তার ছোট ছেলে তার মাকে জিজ্ঞেসা করতেছে, মা তুমি সাংবাদিককে কেন সাদি করলা? তখন ওই বাচ্চার মা কারন জিজ্ঞেসা করলে বাচ্চাটি বলেন, সাংবাদিকদেরতো পয়সা নেই, তুমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করতে পারতে। ছোট্ট ঐ শিশুটি তার পরিবারের দূরঅবস্থা ও তার সাংবাদিক পিতা কত কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছেন সেটি উপলব্দি করতে পেরেছেন। হ্যা শুধু ঐ সাংবাদিকই নয় তার মতো হাজারো পেশাদার মফস্বল সাংবাদিকের দিন কাটছে আজ খুবই করুণ অবস্থায়। প্রতিটি পেশায়ই ডিউটি করার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় বেধে দেয়া আছে কিন্তু সাংবাদিকতা এমনই একটা পেশা যেখানে ডিউটির কোন সময় বেধে দেয়া নেই, রাত তিনটা/চারটা কিংবা ভোর ছয়টা/সাতটা যে সময়ই কোন ঘটনা ঘটুক না কেন সাংবাদিকরা ছুটে যায় তথ্য সংগ্রহের জন্য। দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করার পরেও একজন সাংবাদিক তার সঠিক মূল্য পায় না। সঠিক মূল্য না পেলেও সাংবাদিকরা থেমে থাকেনা একটুও। সকলের মাঝে খবরটি পৌঁছে দেয়ার মধ্যেই যেন তারা খুজে পায় আনন্দ। আমাদের বরিশাল নগরীসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় অনেক সৎ পেশাদার সাংবাদিক আছে যাদের সংসার খুবই করুণ অবস্থায় চলছে। অফিস থেকে নামমাত্র সম্মানিতে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে খুবই কষ্ট হয়। বরিশাল শহরের স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে হাতেগোনা কয়েকজন সংবাদকর্মীকে দেয়া হয় বেতন, এদের মধ্যে আবার নামকরা কয়েকটি পত্রিকা ছাড়া বেশিরভাগ পত্রিকায়ই সংবাদকর্মীদের বেতন দেয়া হয় না। তারপরেও সংবাদকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন পেশাটাকে ভালোবেসে। যুবকদের পক্ষে এটা সম্ভব হলেও সিনিয়রদের পক্ষে ছিলো এটা কষ্টসাধ্য। বরিশাল বিভাগরে কোন এক উপজেলার সিনিয়র এক সাংবাদিকের সাথে আলাপকালে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘দিন দিন আমাদের উপজেলায় নামধারী সাংবাদিকদের সংখ্যা বেড়েই চলছে, এতে কোন দুঃখ ছিলোনা কিন্তু নামধারী এসব সাংবাদিকরা হাটে-বাজারে যেসব কার্যকালাপ করে টাকা উপার্যন করে তা দেখে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে ভাবতেও লজ্জা লাগছে। এসবের মধ্যে কেউ কেউ হোন্ডার ড্রাইভার আবার কেউ কেউ ইলেকট্রনিক্সের দোকানে মেকানিকও ছিলেন। তাদের জন্য আজ সাংবাদিকতা পেশাটা নষ্ট হওয়ার উপক্রম।’ বরিশাল শহরে প্রতিদিন বের হলেই দেখতে পাই প্রেস লেখা বাইক, এসব বাইকগুলোর চাকলদের মধ্যে বেশিরভাগদের আজ পর্যন্ত কোন প্রোগ্রামে সংবাদ কাভারেজ করতে দেখিনাই। এসব নামমাত্র সাংবাদিকরা চসে বেড়ান নগরীর বিভিন্ন স্থান। সাধারন মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় অর্থ। বিভিন্ন সময়ে নগরীতে এমন কয়েকজন ভূয়া সাংবাদিককে আটক করেছে পুলিশ। বিভিন্ন ভূইভোড় প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকা থেকে অর্থের বিনিময়ে কার্ড নিয়ে এসব অপকর্ম করে বেড়ায় এরা। শুধু প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়াই নয়, বিভিন্ন অনুমোদনবিহীন টিভি চ্যানেলে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কার্ড আনে এরা। পরে সেই টাকা উঠানোর জন্য চসে বেড়ায় সর্বত্র। এসব ভূয়া সাংবাদিকদের জন্য পেশাদার সাংবাদিকররা আজ হুমকির মুখে, এসব ভূয়া সাংবাদিকদের জন্য আজ সাংবাদিকতাকে মানুষ অন্য দৃষ্টিতে দেখছেন। শুধু এসব ভূয়া সাংবাদিকরাই সাংবাদিকতার এই করুণ অবস্থার জন্য দায়ী নয়, এই করুণ অবস্থার জন্য দায়ী কিছু কিছু ভূইফোর পত্রিকার মালিকেরাও, যারা টাকার বিনিময়ে হাতে তুলে দেয় কার্ড এবং বেতন চাইলে যারা ছাটাই করেন সাংবাদিকদের সেসকল মালিকরা। বরিশাল সহ দেশের সিনিয়র সাংবাদিক নেতাদের কাছে দাবী জানাচ্ছি আপনার পেশাদার সাংবাদিকদের স্বার্থে এসব ভূয়া সাংবাদিক ও স্বার্থলোভী ভূইভোড় পত্রিকা মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন, তা না হলে একেক করে হারিয়ে যাবে প্রকৃত সাংবাদিকরা।
লেখকঃ বরিশাল প্রতিনিধি আনন্দ টেলিভিশন ও সভাপতি বরিশাল তরুণ সাংবাদিক ফোরাম। ই-মেইলঃ nahidbsl2014@gmail.com
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply