ববি প্রতিনিধি :শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির নির্দেশক্রমে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পরীক্ষামূলক অনলাইন ক্লাস শুরু করছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়(ববি)। গতকাল শুক্রবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস।
তিনি জানান, ‘আমরা পরীক্ষামূলকভাবে দেখতে চাচ্ছি কত পার্সেন্ট শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাসে আসার সক্ষমতা রয়েছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। শিক্ষার্থীরা যদি এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছুটা উপকৃত হয় সেটাই উদ্দেশ্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে বিভাগগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এটা আসলে চাপিয়ে দেওয়ার কিছু না। সবার সুবিধা অসুবিধার কথা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এদিকে অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যাণ্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী সারাহ জামান জানান, ‘অবশ্যই অনলাইন ক্লাস একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু যদি এটা আমাদের দেশের জন্য বলা হয় তাহলে বলব, আমরা এখনও অনলাইন ক্লাস করার উপযোগী হয়ে উঠিনি। কারণ বিদেশে ঘরে ঘরে ইন্টারনেট সুবিধা আছে। আমাদেরও হাতে হাতে স্মার্টফোন আছে কিন্তু ইন্টারনেট কানেকশনটা ঠিক সবার হাতে নেই। আর কানেকশন থাকলেও তার যে গতি তা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। আর এই লকডাউনে যেখানে ভাত জোগাড় করতে হয়রানি হচ্ছি সেখানে কিভাবে অনলাইন ক্লাস করা সম্ভব?
তিনি আরো বলেন, ‘যদি একান্তই দরকার হয় তাহলে, লেকচার রিলেটেড পিডিএফ সাজেষ্ট করতে পারেন শিক্ষকগণ। এতে করে ঘরে থাকলেও চর্চায় থাকা যেতে পারে।’
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম নিলয় বলেন, ‘আধুনিক যুগে অনলাইন ক্লাস আশীর্বাদ স্বরূপ। তবে দেশের এমন পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম
সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, কেননা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের। অনলাইন ক্লাসের জন্য স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটপের দরকার, যা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর নেই। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গ্রামের অবস্থান করায় সীম অপারেটরগুলোতে নেট স্পিড নেই বললেই চলে। এছাড়া নেটের মূল্য অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় এই সংকটকালে অধিকাংশ শিক্ষার্থী নেট কিনতে অক্ষম হবে।’
অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে বিভাগের প্রস্তুতি ও শিক্ষার্থীদের সমস্যার ব্যাপারে জানতে চাইলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. তারেক মাহমুদ আবীর বলেন, ‘আমাদের ভিসি স্যার অলরেডি বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের মেইলে ‘জুম’ কিভাবে ডাউনলোড করে ক্লাস নিতে হবে সেই ইন্সট্রাকশন দিয়েছেন। প্রশাসন থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর আমি বিভাগের সকল শিক্ষকের সাথে কথা বলেছিলাম, শিক্ষকরা সকলে ক্লাস নিতে পারবেন, তাদের কোনো সমস্যা নেই। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে অনলাইন ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভোটের প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনলাইনে ক্লাস করার সক্ষমতা নেই। বাকি ৪০ শতাংশের আছে। আমরা চিন্তা করেছি খুব শীঘ্রই এই ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে নিয়ে ট্রায়াল বেসিসে ক্লাস শুরু করব। দেখব এটা কাজ করছে কিনা।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রথমে ম্যাটারিয়ালস আমরা মেইলে পাঠাব। শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা মাথায় রেখেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যাণ্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রেহানা পারভিন জানান, ‘আমার বিভাগে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জুম ব্যবহার করে আমি থার্ড ইয়ারের ক্লাস নিয়েছি। কিছু শিক্ষার্থীর কানেকশনে সমস্যা ছিল। আস্তে আস্তে আমরা অন্য ইয়ারের ক্লাস নেওয়ারও প্ল্যান করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘পুরোপুরি না হলেও একটু একটু করে অনলাইনে ক্লাস শুরু করার সময় এসেছে বলে আমি মনে করি। তা নাহলে শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে যাবে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘ইউজিসির নির্দেশনা মোতাবেক আমরা পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইন ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেখি রেসপন্সটা কেমন আসে। অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে যেসব সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা আছে সেগুলো বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply