নিরাপরাধ দুই ব্যক্তিকে রাতভর হেফাজতে আটকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বরিশালের কাজিরহাট থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। গভীর রাতে সড়ক থেকে ধরে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলা হয়। পরবর্তীতে থানা হেফাজতে রাতভর আটকে নির্যাতনের পরে সকালে অর্থসমঝোতায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
এই গুরুতর অভিযোগ ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) খালেদুর রহমান ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রদীপের বিরুদ্ধে।
ঘটনাচক্রে পুরো বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার কারণে খোদ কাজিরহাট থানা পুলিশও এক ধরনের অস্বস্তিতে রয়েছে। বিশেষ করে এই মাদক বাণিজ্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুল হককে বেশিমাত্রায় বিপাকে ফেলেছে।
যদিও তিনি বলছেন- ঘটনার বেশ কয়েকদিন আগে ছুটিতে গিয়ে রাজধানীতে অবস্থান করছিলেন।
ঘটনায় প্রকাশ গত বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) গভীর রাতে থানাধীন বিদ্যানন্দনপুর ব্রিজ এলাকায় বিকাশ চন্দ্র সীল, সুজিত চন্দ্র সীল ও মনতোষ চন্দ্র সীলকে আটক করেন কাজিরহাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রদীপ। একই সময়ে সুজন নামে এক পথচারী আসলে তাকেও আটক করেন তিনি।
ওই সময় সুজনের কাছে গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ তুলে চারজনকে থানায় নিয়ে যাওয়ার ভয়ভীতি দেখানো হয়। তখন তাদের মধ্যে মনতোষ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ডাৎ-চিৎকার শুরু করলে তাকে ছেড়ে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখে পুলিশ। পরবর্তীতে বিকাশ ও সুজিতকে মাদকের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বিকাশ ও সুজিত অভিযোগ করেন- পার্শ্ববর্তী ভাষাণচর ইউনিয়নের তাদের একটি সেলুনের কাজ চলামান রয়েছে। সেখানে কাজ শেষে ফিরতে দেরি হওয়ার পায়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলেন। তখন পুলিশের এসআই প্রদীপ সড়কে তাদের আটক করেন। কিন্তু তাদের কাছে পুলিশ কিছু না পেলেও পরবর্তীতে আসা সুজনের কাছে গাঁজা পাওয়া যায়। এই অভিযোগে সুজনসহ তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু সুজনের সাথে তাদের কোন ধরনের সম্পর্ক নেই। এমনকি সুজনকে তারাও চেনেনও না।
পরবর্তীতে থানা হেফাজতে রাখার পরেই বিকাশ ও সুজিতের পরিবারের সাথে একটি অর্থসমঝোতায় যাওয়ার প্রস্তাব করেন এসআই প্রদীপ। এমনকি বিকাশ ও সুজিতের পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকাও দাবি করেন। একপর্যায়ে সেই রাতেই ১২ হাজার টাকায় বিষয়টি মধ্যস্ততা করেন বিদ্যানন্দনপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর রিয়াজ। কিন্তু সেই টাকা দিতে না পারায় তাদের দুইজনকে থানা হেফাজতে রাত কাটাতে হয়। শুক্রবার সকালে ১২ হাজার টাকা এসআই প্রদীপের হাতে বুঝিয়ে দেওয়ার পরে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
যদিও ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরে এই মেম্বর রিয়াজ মধ্যস্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলছেন- তার ওয়ার্ডের বাসিন্দা হওয়ার কারণে থানা পুলিশে সুপারিশ রেখেছিলেন।’
অথচ বিকাশ ও সুজিতের ভাষ্যমতে রিয়াজ মেম্বরের মধ্যস্ততায়ই এসআই প্রদীপ ও ওসির সাথে সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু থানা পুলিশের সাথে তার সু-সম্পর্ক থাকার কারণে বিষয়টি এখন অস্বীকার করছেন।
উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রদীপ বলছেন সুজনের কাছ থেকে মাদক উদ্ধারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের তিনজনকে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরবর্তীতে মুচলেকা রেখে বিকাশ ও সুজিতকে ছেড়ে দিয়ে সুজনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।’
অবশ্য নিরাপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানো ও অর্থসমঝোতার বিষষয়টি অস্বীকার করে এসআই প্রদীপ এবার বলছেন- পুরো বিষয়টি সম্পর্কে ওসি তদন্ত স্যার অবহিত। মুলত তিনি মুচলেকা রেখেই তাদের দুইজনকে ছেড়েছেন।
ফলে বুঝতে আর বাকি থাকে না যে অর্থ লেনদের বিষয়টিতে ওসি খালেদুর রহমানও জড়িত।
তবে এই বিষয়ে জানতে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন রাখতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ওসি তদন্ত। একপর্যায়ে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন- একটি থানার অভ্যন্তরীণ বিষয়। সুতরাং এই বিষয়ে সাংবাদিকরা তার কাছে জিজ্ঞাস করার সুযোগ রাখে না বলে মনে করেন তিনি।’
এই বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুল হক বলছেন- ঘটনার সময় তিনি ছুটিতে ছিলেন। যে কারণে বিষয়টি জানেন না। খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবেন এবং অভিযোগের প্রমাণ পেলে বিষয়টি উচ্চপদস্থ কর্র্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরবেন।’
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply