অনলাইন ডেস্ক// কেমিক্যালের কারণে নয়, গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চকবাজারে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। গ্যাসের সিলিন্ডারটি ওয়াহেদ ম্যানসনের হোটেল বা ভবনটির সামনে একটি গাড়ি থেকে বিস্ফোরিত হয়েছে। এমনকি অগ্নিদগ্ধ কারও দেহে কেমিক্যালের চিহ্ন বা গন্ধ পাওয়া যায়নি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।প্রাথমিক তদন্তে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে চকবাজার এলাকার চুড়িহাট্টা জামে মসজিদ সংলগ্ন আসগর লেন, নবকুমার দত্ত রোড ও হায়দার বক্স লেনের মিলনস্থলে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। এই গলিপথের একপাশে ওয়াহেদ ম্যানসন। অন্যপাশে বাচ্চু মিয়ার গলি।
ওয়াহেদ ম্যানসনের নিচতলায় হোটেল ও ওপরের তলায় কসমেটিকসের গুদাম ছিল। এর আশপাশের কয়েকটি দোকানে বিক্রির জন্য প্লাস্টিকের গ্রেনুলার রাখা ছিল।এই এলাকায় কেমিক্যালের কারখানা ছিল উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আশপাশে কেমিক্যালের কোনো কারখানা বা গোডাউন (গুদাম) ছিল না। এলাকাবাসী ভাষ্য অনুযায়ী, এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারবাহী একটি গাড়ি রাখা ছিল। এ সময় হোটেল অথবা গাড়ি রাখা একটি গ্যাস সিলিন্ডার হঠাৎ করে বিস্ফোরিত হয়। ওই বিস্ফোরণে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই আগুন বৈদ্যুতিক লাইনের ট্রান্সফরমারে ধরে যায়। এতে ওই ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ ঘটে। এর ফলে ওই পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ফলে ওই স্থানের বাসিন্দারা অন্ধকারে বের হওয়ার পথ হারিয়ে ফেলেন। ওয়াহেদ ম্যানসন ও বাচ্চু মিয়ার বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
এ ছাড়া আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিলিন্ডারবাহী গাড়িটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। রাস্তায় কসমেটিকসের প্রচুর বোতল ও প্লাস্টিকের গ্রেনুলার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে।তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, শিল্প সচিব আবদুল হালিম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে মহাপরিচালক-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনসহ শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের কর্মকর্তারা চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় শিল্পমন্ত্রী জনসাধারণ, প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দুর্ঘটনার সূত্রপাত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর বিষয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া মন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ভর্তি আহত, দগ্ধ রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। দগ্ধদের দেহে কেমিক্যালের চিহ্ন বা গন্ধ ছিল না উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সাতজন নারী ও পাঁচ শিশু রয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দগ্ধ ৫২ জন ভর্তি হয়েছিলেন। এদের মধ্যে ৪১ জন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়ে যান।
বাকি ১১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে নয়জন বার্ন ইউনিটে এবং বাকি দুজন ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেছেন যে, ভর্তি হওয়া অগ্নিদ্বগ্ধ রোগী কারও থেকে কেমিক্যালের চিহ্ন অথবা গন্ধ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া অগ্নিদগ্ধ দেহগুলো ড্রাই ফ্লেমে দগ্ধ ছিল।প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, অগ্নি দুর্ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশসহ ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মফিজুল হককে আহ্বায়ক করে গঠিত এই কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এই কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply