পটুয়াখালী জেলা এখন হাঁটছে ঢাকার পথে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুপার শপে পাওয়া যাচ্ছে যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার। ওইসব দোকানগুলোতে পেট্রলসহ দাহ্য পদার্থের সঙ্গে সিলিন্ডার এলোমেলোভাবে রাখা হয়। ফলে জেলায় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীর সঠিক কোনো পরিসংখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে লাইসেন্স ব্যতীত গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধে দ্রুত অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার আট উপজেলার প্রতিটি বাজারে মুদি এমনকি চায়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলেন্ডার। ১০টির কম সিলেন্ডার দোকানে থাকলে লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না-এমন আইনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে সিলিন্ডারের ব্যবসা করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর তাই এ সকল দোকান লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই চলছে। ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী যেখানে সেখানে সিলিন্ডারের বোতল ফেলে রেখে ব্যবসা করছেন। বেশিরভাগ দোকানি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
গ্যাস সিলেন্ডা গুলো কখনো ট্রাক, অটো বা টমটমে করে পৌঁছে দেয়া হয়। নামানোর সময় ছুড়ে ফেলা হয় যার ফলে যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। ঘটতে পারে চকবাজারের মতো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা।
জেলা ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে পটুয়াখালী জেলায় ২০১৭ সালে দুইটি দুর্ঘটনা ঘটে। একই বছর বৈদ্যুতিক গোলযোগ-সিগারেটের টুকরাসহ বিভিন্ন কারণে মোট ৫১টি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৭১ লাখ ৪৩ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। ২০১৮ সালে দুইটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মোট ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। একই বছর বৈদ্যুতিক গোলযোগ-সিগারেটের টুকরাসহ বিভিন্ন কারণে মোট ৬৪টি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত গ্যাস সিলেন্ডার বিস্ফোরণের দুটি ঘটনা ঘটে।
শহরের ঢাকা স্টিলের পরিচালক মো. ইকবাল বলেন, ‘৭৫ পাউন্ডের গ্যাস সিলিন্ডারের আমরা কাজ করি। যখন দেখি সিলিন্ডারের ঢাকনা লুস বা জং ধরছে তখন ওইটা বাতিল করি, কারণ তখন বিস্ফোরণ ঘটে। আর গ্যাস সিলিন্ডার তৈরির তারিখ বা মেয়াদ শেষ হবে কবে তার কোনো নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নেই।’
তিনি আক্ষেপ করে আরও জানান, দুই টাকার একটা শ্যাম্পু কিনলে সেটিতে মেয়াদ, উৎপাদনের তারিখ দেয়া থাকে কিন্তু সিলিন্ডারে থাকে না। আমরা এটা নিয়ে কাজ করি। তাই এটি যদি আরও নিরাপদ করা হয় তবে সেটি ভালো হতো।
অ্যাডভোকেট সৈয়দ কিশোর বলেন, ‘সিলিন্ডার সম্পর্কে ধারণা নেই অনেক খুচরা ব্যবসায়ীর। আমাদের নিরাপদ শহরগুলো যে ঢাকার মতো অনিরাপদ হচ্ছে সেদিকে কি কারও নজর আছে? শহরের খাল, পুকুর, দিঘিগুলো দিন দিন দখল হচ্ছে। আগুন লাগলে নেভানোর পানি পাবেন কোথায়? শহরের নীতিনির্ধারকরা একটু ভাবুন।’
তবে শহরের পুকুরগুলো ব্যবহার উপযোগী করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ।
পটুয়াখালী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ফিরোজ আহমেদ জানান, এভাবে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সকল জিনিস আলাদা আলাদা রাখতে হবে। খুচরা ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীরা যেভাবে রাখেন সেভাবে রাখার নিয়ম নেই।
তিনি আরও জানান, ‘বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪’ এর অধীনে ‘গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা ২০০৪’ এর ৬৯ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া অনধিক ১০টি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদ করা যাবে না। তবে বিধির ৭০ ধারা অনুযায়ী এসব সিলিন্ডার মজুদ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং আগুন নিয়ন্ত্রক সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হবে। সিলিন্ডার গ্যাস স্থাপন প্রাঙ্গণে দিয়াশলাই বা আগুন লাগাতে পারে-এমন কোনো বস্তু বা সরঞ্জাম রাখা যাবে না।
ফিরোজ আহমেদ জানান, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করে তার নির্দেশনায় সনদ ছাড়া অবৈধ সকল প্রতিষ্ঠানকে খুব শিগগিরই মোবাইল কোর্টের আওতায় আনা হবে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply