বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৮:৪৭

শিরোনাম :
কথা দিচ্ছি আপনাদের সেবায় আমি সর্বদা পাশে থাকবো : চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম জাকির হোসেন উপজেলার উন্নয়নে আপনাদের পাশে আমি সর্বদা রয়েছি -ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিন মোটরসাইকেল প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা, আহত-২ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া কে এই জাকির হোসেন প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম যারা আমার জন্য কাজ করেছে আমি তাদের রেখে কখনো পালিয়ে যাইনি-এসএম জাকির হোসেন রেমিটেন্স আহরণে রূপালী ব্যাংকের ২ দিন ব্যাপী ক্যাম্পেইন সম্পন্ন সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ

জেলে পল্লীর শিশুদের কাঁধে সংসারের বোঝা, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত

dynamic-sidebar

নিয়ামুর রশিদ শিহাব :: পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা এক বিপন্ন জনপথ চর বাংলা। সেখানে হাজারো জেলেদের বসবাস। নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা ঐ জনপদের বসতি ছাড়া আর কিছু নেই। নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই । পৈতৃক পেশাকে ধরে রেখেছেন উপকূলের হাজারো জেলে। শিক্ষার আলো পৌঁছালেও যেন শিক্ষা গ্রহণ না করেই জেলে হিসেবে গড়ে উঠছে তাদের শিশুরা। দারিদ্র্যের সংসারে একটু আয়ের আশায় এখানকার শিশুরা খুব কম বয়সেই বেছে নিতে বাধ্য হয় নদী ও জেলে জীবন। যেখানে তাদের এই বয়সে হাসি-খুশি ও আনন্দ-উল্লাসে বেড়ে ওঠার কথা, সেখানে শুধুই দারিদ্র্যের কষাঘাতে জরজড়িত। যে বয়সে শিশুটির হাতে থাকার কথা ছিল বই-খাতা, সেই শিশুটির হাতে আজ মাছ ধরার জাল। দিন কাটে তার নদীর বুকে। সন্তানদের পড়ালেখা করানোর প্রতি আগ্রহ নেই তাদের বাবা মায়ের। আধুনিক সভ্যতা থেকে পিছিয়ে পড়া এই জনপদের অভিভাবকদের অসচেতনতা ও নদী ভাঙ্গনের কারণে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না এখানকার শিশুরা।

উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে পল্লীর অধিকাংশ শিশুদের জীবনের গল্প এমন। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলে নৌকায় কাজ করা অধিকাংশের বয়স আট থেকে পনেরো বছর। জীবনের প্রয়োজনে তারা এই বয়সে হয়ে ওঠে দক্ষ মাঝি বা জেলে। এই শিশুদের কেউ বাবার সঙ্গে জাল টানে, কেউ নৌকার বৈঠা ধরে, কেউবা জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে ঝুড়িতে তোলে। আকৃতি অনুযায়ী মাছ বাছাই করার কাজও তারা করে। এভাবেই নিচ্ছে তারা দক্ষ জেলেতে পরিণত হওয়ার শিক্ষা। মাঝে মাঝে বাবার কাজের দায়ভারও তাদের বইতে হয়। ধরা মাছ নিয়ে বাবা হাটে গেলে বাবার অনুপস্থিতিতে উত্তাল নদীতে নৌকা নিয়ে চলে যায় শিশুটি। জোয়ার ভাটা ওদের মুখস্থ। দিন শেষে এই মাছ বিক্রি করে যা পায় তা দিয়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হয় তাদের পরিবারের মানুষগুলো।

চরবাংলা, চরবিশ্বাস, চরকাজল, চরকপাল বেড়া, চরমোন্তাজ, সোনারচরসহ এসব অঞ্চলের জেলে পরিবারগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রতিনিয়ত অনিশ্চতায় বিবর্ণ হয়ে ওঠে জেলে পল্লীর হাজারো শিশুর শৈশব। শিশুশ্রমের বেড়াজালে বন্দিজীবন আর বাবার কষ্টের সঙ্গী হতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর পড়া হয় না অধিকাংশ শিশুর। ফলে কোমলমতি সব শিশুর কাঁধে ওঠে সংসারের বোঝা। বাবা-মা ছোট ভাইবোন নিয়ে বেঁচে থাকাই তখন তাদের জীবনের মূলমন্ত্র। অনেক শিশুর স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয়ে ওঠে না। চরবাংলার ঘাটের কাছেই বাবার মাছ ধরার সঙ্গী হিসেবে ছিলেন দশ বছরের শিশু লিমন।

লিমনের ভাষ্য ‘স্কুলে যাইতে তো ইচ্ছা করে তয় কামের লাইগ্যা যাইতে পারি না। জোয়ার আওয়ার আগেই জাল পাতি, আর ভাটায় পানি টানলে মাছ লইয়া আইতে আইতে স্কুল ছুটি হইয়া যায়।’ চরবাংলার ঘাটেই কথা হয় আরো কিছু জেলে শিশুর সঙ্গে।

মনির, আব্বাস ও রুবেল নামের এই শিশুরাও বলছে, বাবার কাজের সঙ্গী হতে হয় বলেই তারা স্কুলে যেতে পারে না। চরবিশ্বাসের কয়েকজন জেলের সাথে কথা বললে তারা জানান, মাছ ধরা আমাদের পৈতৃক পেশা। এই পেশাকে ধরে রেখেছি এখনো। আমাদের সন্তানরা সেই পেশা ধরে রাখবে। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করানোর খরচ নেই। তাই মাছ ধরার কাজ শিখাচ্ছি।ছেলেবেলা থেকে কাজ শিখলে বড় হয়ে একজন দক্ষ মাঝি হিসাবে নিজেদের গড়তে পারবে ওরা।

চরকাজলের জেলে মাহবুব (৪৫) বলেন, ‘সব পরিবারই এখন বোঝে যে, তাগো পোলাপাইনগুলারে পড়ানো উচিৎ। কিন্তু প্যাডের (পেটের) তাগিদে সবাই তো পড়াইতে পারে না।’

চরবিশ্বাসের ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন বাবুল মুন্সী জানান, ‘নৌকায় একজন জেলের পক্ষে জাল টেনে মাছ ধরা কষ্টকর। মাছ ধরতে হলে আরো লোকের দরকার হয়। দরিদ্র জেলেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার পরিবারের মানুষগুলোকে সহকারী হিসেবে ব্যবহার করে। মূলত এই কারণে শিশুগুলোকে স্কুল ছাড়তে হয়।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোজ্জাম্মেল হক বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলে শিশুদের শিক্ষিত করতে হবে এমন প্রবণতা কম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, এই অঞ্চলে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের বিচরণ বেশি। শিশুদের শিক্ষিত করার প্রবণতা তখন বৃদ্ধি পাবে যখন সমাজ থেকে অভাব দূর করা যাবে। প্রতিটি শিশুর জীবনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরিবারকে সচেতন করতে পারলে কমে আসবে শিক্ষাবঞ্চিত শিশুর সংখ্যা।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net