অনলাইন ডেস্ক:: আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঈদ সার্ভিসের নামে পঞ্চাশটির বেশি ফিটনেসবিহীন লঞ্চ নামানোর উদ্যোগ নিয়েছে কিছু অসাধু লঞ্চ মালিক। এসব ফিটনেসবিহীন লঞ্চগুলোকে যাত্রী সাধারণের কাছে আকর্ষনীয় করে তুলতে ইতিমধ্যে বডি সংস্কার ও সাজসজ্জার কাজ শেষ হয়েছে।
ঈদের অতিরিক্ত যাত্রী আনা-নেয়ার ভিড় সামলাতে এসব লঞ্চগুলো নৌ রুটে চলাচল করবে। তবে সংস্কার করা লঞ্চগুলো সবই রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে রয়েছে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে এসব লঞ্চে যাতায়াত করতে হবে যাত্রীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব লঞ্চের তলায় ফুটো, দীর্ঘ ফাটা, অধিকাংশ বডিতে জং ধরা ছিল। ঈদে যাত্রী বহন করতে ফুটোগুলোকে ঝালাই দিয়ে জোড়া দেয়া হয়েছে। এবং জং ধরা বডি ঘষেমেজে রং করা হয়েছে। ঈদ সার্ভিসের নামে ঈদের তিনদিন আগে নৌ-রুটে নামানো হবে এ লঞ্চগুলো। চলাচলের অযোগ্য এমন লঞ্চ ঈদে নৌপথে নামানো হলে যাত্রীদের জন্য নৌযানগুলো মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে হয়তো এর খেসারত দিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এমনটাই মন্তব্য করেছে বিশেষজ্ঞরা।
নৌ পরিবহন সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২ জুন) থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে নৌপরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়াও ঈদে বাড়ী ফেরার জন্য যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে বাড়ানো হচ্ছে নৌযানের সংখ্যা। ঈদে সব মিলিয়ে প্রায় শতাধিক নৌযান বাড়ানো হবে। কিন্তু বর্তমানে নৌপথে যেসব যান আছে তাও নৌপথের যাত্রীদের জন্য যথেষ্ট নয়। প্রতিদিন যাতায়াত নিয়ে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। এমনকি বর্তমান নৌপথের অধিকাংশই যানগুলো ফিটনেসবিহীন। এখন প্রশ্ন হলো, ঈদে যাত্রী সেবা বাড়ানো নামে বাড়তি লঞ্চ কোথায় পাবে সংশ্লিষ্টরা।
ঈদের সময় এলেই একশ্রেণীর অসাধু মালিকরা অকেজো লঞ্চগুলোকে কোনো মতো মেরামত ঈদ সার্ভিস নামে নামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রতিবারের মতো এবারের ঈদেও চলাচলের অযোগ্য নৌযানগুলোকে ঘষা-মাজা ও ছোট-বড় ফুটো জোড়াতালি দিয়ে যাত্রী বহনের বাণিজ্যে করার প্রস্তুতি শেষ করেছে সংশ্লিষ্টরা।
যাত্রী সেবা নামে ঝুঁকিপূর্ণ এসব নৌযান নামানো হলে যানগুলো যাত্রীদের মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে এ বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা।
সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর, বিআইডব্লিউটিএ এবং এনজিও সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোতে যাতায়াতকারী লঞ্চের শতকরা ৭৫ ভাগেরই ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। ৮০ ভাগ লঞ্চের তৈরি অবকাঠামোর সঙ্গে মূল নকশার মিল নেই। এমতাবস্থায় বছরের পর বছর লঞ্চগুলো চলছে। অথচ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিআইডব্লিউটিএসহ যেসব তদারকি প্রতিষ্ঠান এসব প্রতিরোধের কাজ করছে। অথচ তাদেরই কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করেই ঝুঁকিপূর্ণ এসব নৌ-যান নদীতে নামানো হচ্ছে। আর এসব লঞ্চের অধিকাংশ মালিকই সরকারি দলের ছত্রছায়ায় প্রতিবছর ঈদে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পরিবহন করে। অথচ তারা প্রতিবারই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা ও কিশোরগঞ্জের নৌপথ দিয়ে ঈদে বাড়ী ফিরবে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ। রুটেগুলো চলাচলের উপযুক্ত হলেও নৌযান নিয়ে যাত্রীদের রয়েছে নানা ভয়-ভীতি। কতটাই নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবে এমনটাই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যাত্রীদের মধ্যে।
সরেজেিমনে দেখা গেছে, রাজধানীর পোস্তগোলা ও কেরানীগঞ্জের ডক ইয়ার্ডগুলোতে পরিত্যক্ত নৌযানগুলো জোড়াতালি দিয়ে চলাচল-উপযোগী করার কাজ শেষ হয়েছে। দীর্ঘদিন অযত্ম-অবহেলায় পড়ে থাকা এসব লঞ্চে ওয়েল্ডিং ও রঙ লাগিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। ফিটনেসহীন এসব লঞ্চ যাত্রী পরিবহনের অনুপযুক্ত হলেও ঈদে তাদের বেশ কদর রয়েছে।
রবিশালের একাধিক লঞ্চ যাত্রী অভিযোগ করেছেন, প্রতি বছরই নদীতে লঞ্চ ডুবছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। অপরদিকে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা তীরের ডকইয়ার্ডগুলো পুরনো লঞ্চ সংস্কার, মেরামত ও রং করে সাজিয়ে যাত্রীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। অনেকে ডকইয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে নদীতেই লঞ্চ রং ও সংস্কারের কাজ করেছেন। প্রতিবছরই এভাবেই ঈদকে কেন্দ্র করে ফিটনেসবিহীন শত শত লঞ্চ যাত্রী পরিবহন করে। আর ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। অথচ এ বিষয়ে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply