নিজস্ব প্রতিবেবদক :: বরিশাল নৌবন্দরে রাজধানীমুখী যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। ঈদের পরেরদিন থেকে গত তিনদিনে যে সংখ্যক যাত্রী হয়নি তার তুলনায় অনেক বেশি যাত্রীর সমাগম ঘটেছে প্রথম কর্মদিবস রোববার (০৯ জুন) বিকেলে। ফলে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার লঞ্চগুলোতে যাত্রী ভিড়ে তিল ধারনের ঠাঁই নেই দশা।
এদিকে যাত্রী বাড়লেও বাড়েনি লঞ্চের সংখ্যা। ফলে লঞ্চের ডেক থেকে শুরু করে কেবিনের বারান্দাও যাত্রীদের জায়গা নিতে দেখা গেছে। বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে সরাসরি ২৩টি বিলাশবহুল লঞ্চ থাকা সত্ত্বেও রোববার ১৭টি যাত্রীবাহী নৌ-যান বিশেষ সার্ভিসে রয়েছে। যা শনিবারের তুলনায় কম।
যদিও লঞ্চ মালিকদের দাবি, যে যাত্রী রয়েছে তা রাত্রীকালীন ১৪টি লঞ্চেই বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া যাবে। আর বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কোনো সুযোগ নেই। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লোড লাইন দেখে লঞ্চ ঘাট থেকে ছাড়া হচ্ছে।
আরো পড়ুন- বাড়তি চাপ সামলাতে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে ১৫ লঞ্চ
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. কবির হোসেন বলেন, গত ৬ জুন থেকে রাজধানীর উদ্দেশ্যে ঈদ ফেরত যাত্রীদের বরিশাল থেকে যাত্রা শুরু হয়। গত ক’দিন ধরে আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো ছিলো না। থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে নদী বন্দরে যাত্রীদের চাপ তুলনামূলক ছিলো না।
তিনি বলেন, আজ দুপুরের পর থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো। নদী বন্দরে এখন পর্যন্ত কোনো সিগন্যাল নেই। তাই রোববার যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। সকাল থেকেই যাত্রীরা রাজধানীর উদ্দেশ্যে বরিশাল নৌবন্দরে আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে নৌবন্দর যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়। তাছাড়া সন্ধ্যা হতেই নদী বন্দরে লঞ্চ ও পন্টুনে যাত্রীদের কারণে তিল ধারনের ঠাঁই নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এদিন রাত্রীকালীন সার্ভিসের ১৪টি লঞ্চে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে ১০টি লঞ্চ বার্দিং করা বিআইডব্লিউটিএ’র জেটিতে। বাকি ৪টি লঞ্চ জেটির অভাবে অন্য লঞ্চগুলোর পেছনে নোঙর করেছে। লঞ্চগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা উঠছেন।
অবশ্য এর আগে বিকেল পৌনে ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে গ্রিনলাইন কোম্পানির দু’টি এবং নিজাম শিপিং লাইন্সের মোট ৩টি ওয়াটারবাস বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঝালকাঠি, বরগুনাসহ বিভিন্ন রুটের আরো ৬টি লঞ্চ বরিশাল ভায়া হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
লঞ্চ যাত্রীদের সঙ্গে আলাপে তারা জানান, ভিড় বেশি। কিন্তু কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা একটাই নদী বন্দরে পর্যাপ্ত জেটি না থাকা এবং ভ্রাম্যমাণ হকার। এদের কারণে স্বাভাবিক যাত্রা ব্যহত হচ্ছে।
যাত্রীবাহী নৌ-যান চলাচল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, গত ক’দিন ধরেই যাত্রীদের চাপ কম ছিলো। কিন্তু তারপরেও অতিরিক্ত লঞ্চ চলেছে। তাই মালিকদের লোকসান গুনতে হয়েছে। এ কারণেই রোববার লঞ্চের সংখ্যা একটু কম মনে হচ্ছে। তবে যে যাত্রী রয়েছে তা ওই লঞ্চগুলোতে করেই পৌঁছে দেওয়া যাবে।
বরিশাল নৌ-বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, আগের চেয়ে যাত্রী একটু বেশি এটা সত্যি। কিন্তু আমরা কোনো লঞ্চই ওভারলোড হয়ে ছাড়তে দিচ্ছি না। লঞ্চ ছাড়ার আগে চেক করে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে লোড লাইন দেখে নিচ্ছি।
এদিকে যাত্রীদের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌ বন্দরের ভেতরে এবং বাইরে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। র্যাব-৮, মেট্রোপলিটন পুলিশ, ডিবি, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, মেরিন ক্যাডেট ও স্কাউট সদস্যরা নদী বন্দরে যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন বলে জানিয়েছেন সদর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, যেসব যাত্রী লঞ্চে উঠতে পারবে না তাদের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা রয়েছে। তারা অস্থায়ী এবং স্থায়ী ছাউনিতে রাত কাটাতে পারবে। সকালে আবার যে লঞ্চগুলো বরিশালে পৌঁছাবে সেগুলোতে করে বরিশালের যাত্রীদের ঢাকায় পাঠানো হবে।
এদিকে সন্ধ্যায় ঘাটে নোঙর করা পারাবত-১২ লঞ্চের এক যাত্রী হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। যার মরদেহ সিটি মেয়র কলাপাড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এর আগে বিকেল থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাদ সাদিক আব্দুল্লাহ নদী বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply