অনলাইন ডেস্ক :: বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও মূল আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে হত্যাকাণ্ড পরবর্তী বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, কিভাবে গড়ে ওঠে ‘০০৭ গ্রুপ’, কিলিং মিশন শেষে কোথায় গিয়েছিলো খুনিরা।
ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ০০৭ গ্রুপের সদস্যদের কথোপকথনের বেশ কিছু স্ক্রিনশট থেকে জানা গেছে, পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রুপের সবাই ঘটনার দিন সকাল ৯টায় বরগুনার কলেজ সড়কে অবস্থান নেয়। আলাদা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রিফাত শরীফের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তারা। ১০.২০ মিনিটে শুরু হয় তাদের মূল মিশন।
কলেজ গেট পার হওয়ার পর রিফাত শরীফকে ঘিরে ধরে ০০৭ গ্রুপের সদস্যরা। একের পর এক কিল-ঘুষি-লাথি দিতে দিতে নয়ন বন্ড ও সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরায়েজীর কাছে নিয়ে আসে। শুরুটা করে রিফাতই। হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে কোপাতে থাকে নয়নও। তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে বারবার রিফাত শরীফকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি।
কিলিং মিশন শেষে কলেজ রোড ধরে পশ্চিম দিকে চলে যায় হত্যাকারীরা। উপজেলার দিঘির পাড়ের পশ্চিম দিকের সড়কে অবস্থান নেয় নয়ন ও রিফাত। বাকিরা নিজেদের মত সটকে পড়ে।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নয়ন বন্ডের মা সাহিদা বেগম জানান, ওইদিন সকাল ১১টায় নয়ন তাকে ফোন করে। ফোন রিসিভ করেই তিনি বলেন, ‘এ নয়ন তুই নাকি কারে কোপাইছো। আহারে কার মায়ের কোল খালি করছো।’ ওই সময় নয়ন বলে, ‘কোপাইছি ঠিক করছি, তুমি আমার জামা কাপড় দাও আর টাকা জোগার কর।’ এ কথা বলেই বাসার কাছকাছি একটি দোকানের পেছনে আসে।
সেখান থেকে একটি ছেলেকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। নয়নের মা ওই ছেলের কাছে একটি টি-শার্ট ও প্যান্ট পাঠিয়ে দেয়। পরে আবারো নয়ন তাকে টাকা পাঠাতে বলে। এবার নয়নের মা নিজে গিয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আসেন। এরপর নয়ন ও রিফাত টাকা নিয়ে কেজি স্কুল সড়কের এক বন্ধুর বাড়িতে যায়। সেখানে তারা তিনজন বন্ধুর সাথে কথা বলে। এসময় নয়ন মোবাইল ভেঙে ফেলতে চাইলে একজন ফোনটি রেখে টাকা দিয়ে দেয়। এরপর নয়ন ও রিফাত তাদের আরেক ক্রোক হাওলাদার বাড়ির রিফাতের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে সঙ্গে দেখা করে। সেখান থেকে তারা আলাদা হয়ে যায়। নয়নপুরাকাটা ফেরি পার হয়ে আমতলী গলাচিপা হয়ে পৌঁছে গেছে দশমিনায়। সেখানে বুধবার রাত কাটায় সে। এরপর নৌ ও সড়ক পথে ভেঙে ভেঙে চলে যায় উত্তরবঙ্গের জেলা শহর দিনাজপুর।
ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাত এবং শুক্রবার দিনের প্রথমভাগ পর্যন্ত চেষ্টা চালায় হিলি বর্ডারের চোরাপথ ধরে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু এরই মধ্যে সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি হওয়ায় পালাতে ব্যর্থ হয় সে। আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ছিল নয়ন বন্ডের। নিরাপত্তার স্বার্থে এরপর সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সে।সে মতে, উত্তরবঙ্গের সীমান্ত জেলাগুলোর কোনো একটাতেই আত্মগোপন করে থাকতে পারে নয়ন।
এছাড়া রিফাত ও রিশান ফরাজী ক্রোক থেকে ধুপতি এলাকায় চলে যায়। সেখানে এক বন্ধুর বাড়িতে রাতযাপন শেষে উধাও হয়। রিফাতও সীমান্ত পার হয়ে প্রতিবেশী দেশে পালানোর চেষ্টা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে নয়নকে নিয়ে বিভিন্ন ধরণের তথ্য দিয়েছেন তারই আত্মীয়-স্বজনরা।
নয়নের ফুফা আবদুল খালেক মুন্সি দাবি করেছেন, নয়ন সন্ত্রাসী ছিল না। তাকে সন্ত্রাসী তৈরি করা হয়েছে।
রোববার স্থানীয় সংবাদকর্মীদের তিনি বলেন, রাজনৈতিক ও পুলিশের সহায়তায় সাব্বির হোসেন নয়ন মোল্লা আজ দেশব্যাপী কুখ্যাত নয়ন বন্ড মাদক সম্রাট ও খুনি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
তিনি জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর পূর্বে বরগুনা সরকারি কলেজের চাকরি থেকে অবসর নিয়ে পটুয়াখালীর দশমিনায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। তখন নয়নের বয়স ছিল ৯-১০ বছর।
নয়নের ফুফাতো ভাই সাফায়েত হোসেন বলেন, আমরা দুই ভাই বরগুনায় জন্মগ্রহণ করে বড় হয়েছি। আমাদের মামাতো ভাই নয়ন বরগুনার নোংরা রাজনীতির পাল্লায় পড়ে ধীরে ধীরে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে গেছে। মামা মারা যাওয়ার পর মামীর কোনো কথাই শুনতো না নয়ন।
তিনি বলেন, বরগুনার রিফাত হত্যার ঘটনায় পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আমরা বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। আমরাও রিফাত হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। পাশাপাশি নয়নকে যারা ব্যবহার করে সন্ত্রাসী বানিয়েছেন তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply