মজিবর রহমান নাহিদ ॥ বরিশালে দায়িত্ব পালনকালে কাভার্ডভ্যানের চাপায় আহত পুলিশ সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার মৃত্যুতে শোকের মাতম চলছে পুলিশ বিভাগসহ পুরো বরিশালে।
আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার মৃত্যুর সংবাদ সর্বত্র ছরিয়ে পরার পরপরই যেন পুরো বরিশালে নেমে আসে শোকের ছায়া। এই শোক বাস্তব থেকে রূপ নেয় ভার্চুয়াল জগতেও।
সহকর্মীর এমন নির্মম মৃত্যুর খবর মেনে নিতে পারেনি বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগ। খবরটি শোনার পরপরই সকলে যেন ভেঙ্গে পরেন।
কিন্তু এরকম একটি খবর শুনেও দায়িত্ব পালন থেকে থেমে থাকেনি এক মুহুর্তের জন্যও। শত কষ্ট বুকে চাপিয়ে নগরীর ট্রাফিক ব্যাবস্থাকে ঠিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য।
দায়িত্ব পালনকালে কোন কোন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে আঝোরে কাঁদতেও দেখা গেছে।
একাধিক ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানায়, সার্জেন্ট কিবরিয়া একজন মিষ্টভাসী ও দায়িত্ববান অফিসার ছিলেন। তিনি খুব ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন। তার মতো অফিসার পাওয়া দুষ্কর। আমরা তার এই নির্মমভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারতেছিনা।
ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক শামছুল আলম বলেন, গোলাম কিবরিয়া এভাবে চলে যাবে তা আমরা কখনই ভাবিনি। তিনি কখনই কাজকে অবহেলা করতেন না, এক কথায় আদর্শবান অফিসার ছিলেন।
এদিকে সার্জেন্ট কিবরিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া দেখা দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা। সেখানে অনেক তাঁর কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে স্মৃতিচারণ করেন। পাশাপাশি তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন তারা।
মারুফ হোসাইন নামে এক ফেইসবুক ব্যাবহারকারী লিখেছেন, “গোলাম কিবরিয়া মিকেল,দেখে যেতে পারলেন না যে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন।একজন পুলিশ সার্জেন্ট হয়ে ও সাধারণ মানুষের মাঝে মিশে গিয়ে ছিলেন।জীবনে ভাল কিছু করলে সাধারন মানুষের দোয়া ও ভালবাসা পাওয়া যায় তার প্রমান রেখে গেছেন। আপনাকে আমরা খুব মিস করবো।পরোপারে ভাল থাকবেন।”
আশিকুর রহমান ফাহাদ নামে একজন লিখেছেন, “সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া মিকেল ভাই আর বেচে নেই। এটা মেনে নেওয়া সত্যিই খুব কষ্টের। বেশি ই খারাপ লাগছে ভাইয়ের ছোট্টো বাবুটার জন্যে।
দেখা হইলেই, আপনার সেই মিষ্টি হাসিটা অনেক বেশি মিস করবো। বরিশালের বেশিরভাগ বাইকারদের একজন পছন্দের মানুষ। ওপারে ভালো থাকবেন ভাই। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন।”
উল্লেখ্য, সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত। তার বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের কর্নকাঠী জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। বেলা সোয়া ১২টার দিকে পটুয়াখালীগামী যমুনা গ্রুপের গাড়ি বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যানকে (ঢাকা মেট্রো উ-১২-২০৫৪) থামার সংকেত দেন সার্জেন্ট কিবরিয়া।
কাভার্ডভ্যানটি ট্রাফিকের সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সার্জেন্ট কিবরিয়া একটি মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে কাভার্ডভ্যানটির সামনে গিয়ে ফের তাকে থামার সংকেত দেন। কাভার্ডভ্যানচালক জলিল মিয়া এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্ট কিবরিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠির নলছিটি থানা পুলিশ ধাওয়া করে চালক জলিল সিকদারসহ কাভার্ডভ্যানটি আটক করে।
এদিকে পুলিশ সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল থেকে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যদিকে আজ মঙ্গলবার বাদ আসর (বিকেল সাড়ে ৫টা) রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের শহীদ শিরু মিয়া মিলনায়তনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
আগামীকাল বুধবার সকাল ৮টায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার জন্মভূমি পটুয়াখালীতে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন কিবরিয়া।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply