নিজস্ব প্রতিনিধি॥ বরিশালে জাল সনদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে চাকরি, জানেনা চেয়ারম্যান! এই শিরোনামে বরিশালের স্থানীয় বিভিন্ন প্রিন্ট পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশের পর নড়ে চরে বসেছে ১নং রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়ন পরিষদ। সংবাদের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে সদর উপজেলার ১নং রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ কামালের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সংবাদ প্রকাশের পর সেই গ্রাম পুলিশ কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খোকন। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জানান,পেশাতগত কাজে সাধারন মানুষকে হুমকিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে গ্রাম পুলিশ কামালের বিরুদ্ধে। ভুয়া সনদের ব্যাপারে জানতে চাইলে রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খোকন বলেন, গ্রাম পুলিশ কামাল যখন চাকরী নিয়েছে তখন বিএনপি পন্থী চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চেয়ারম্যান ছিলো। তার সময় এই পরিষদে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।
১নং রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়ন পরিষদে আমি দায়িত্বরত অবস্থায় আজ পর্যন্ত কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি এবং আমি কখোনই অনিয়মকে প্রশ্রয় দেইনা। কামালের বিষয়ে ভুয়া সনদের অভিযোগ পাওয়ার পরে আমি তার কাগজপত্র দেখেছি তাতে তার সব কাগজ ঠিক থাকলেও ভোটার আইডি কার্ডে বয়স একটু বেশি পাওয়া গেছে। যেহেতু তিনি যোগদানের সময় ভুয়া আইডি কার্ডের মাধ্যমে বয়স কম দেখিয়ে চাকরি নেন সেহেতু তিনি আইন বহির্ভূত কাজ করেছেন। আমি অতি শীগ্রই ইউএনও ’র সাথে কথা বলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করবো। এদিকে গ্রাম পুলিশ কামাল নিজ চাকরি বাঁচানোর জন্য সাবেক ইউপি সদস্য আয়নাল মেম্বারের সাথে মোটা অংকের টাকা লেনদেন করার কথা হয়েছে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, বরিশাল সদর উপজেলার রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ পদে ৫ম শ্রেণি পাশ না করেই ৮ম শ্রেণির জাল সনদ এবং ভোটার আইডি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ৪ বছর যাবত চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে কামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
সরকারি বিধানমতে শিক্ষাগত যৌগ্যতা ৮ম শ্রেণি পাশ এবং সর্বচ্চো বয়সসীমা (৩০) ও স্ব-স্ব গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা না হলে গ্রাম পুলিশের চাকুরি করা সম্ভবনা বিধায় সূচতুর কামাল শোলনা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে চৌকিদারী ট্যাক্স-সহ ইত্যাদি ভুয়া কাগজ তৈরী করে।শোলনা এলাকার একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান,চৌকিদার কামাল ইউনিয়ন পরিষদে চাকুরী নেয়ার পরে তার চলাফেরা আচরন অস্বাভাবিক ভাবে বদলে গেছে। সে কাউকে পরোয়া করেনা, গ্রাম পুলিশে চাকুরী করার সুবাধে তার সাথে এয়ারপোর্ট থানার বেশ কিছু পুলিশ সদস্যদের সাথে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। সে নিজেকে পুলিশের সোর্স হিসেবে সকলের কাছে পরিচয় দিয়ে থাকে।কারোর সাথে কোনো সামান্য ঝামেলা হলেও সে তাকে হেনস্থা করতে পুলিশ সদস্যদের ব্যবহার করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র বলছে, সদর উপজেলার ১নং রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ পদে মৃত মোফাজ্জেল চৌকিদার কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে মোফাজ্জেলের মৃত্যুর পরে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশের পদটি শুন্য হয়। এরই সুযোগে সূচতুর কামাল গ্রাম পুলিশের চাকুরী পাওয়ার জন্য উঠে পরে তদ্বির শুরু করে। অন্যদিকে বিশ্বস্থ এক সূত্র জানায়, কামালের নিজ গ্রাম কলাডেমায় তার ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য অনুসারে তার বয়স প্রায় ৪০ বছর ছিল। তবুও সূচতুর কামাল ভুয়া তথ্য দিয়ে জাল সনদ দেখিয়ে নতুন করে আইডি কার্ড তৈরী করে এবং সেই আইডি কার্ডে বয়স দেখানো হয় ২৮ বছর।
এদিকে কামাল তার উদ্দ্যেশ্য হাসিল করার লক্ষ্যে কতিপয় দালাল চক্রের মাধ্যমে ৫০,০০০(পঞ্চাশ হাজার) টাকার বিনিময়ে চাকুরী নিতে রফা দফা হয়। পরবর্তীতে দালাল চক্রের মাধ্যমে কামাল হোসেনকে চাকরিটি হস্তান্তর করে সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল আমিন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কামাল হোসেন জানান,আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেইটা সম্পূর্ণ মিথ্যা আমার কোনো এক শত্রু পক্ষ এরকম ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ১নং রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমান খোকন জানান, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই কামালকে আমার এই পরিষদে গ্রাম পুলিশের চাকুরীতে কর্মরত হিসেবে দেখেছি। আমি যতটুকু জানি কামালের শশুর মৃত মোফাজ্জেলের পদে সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন তাকে চাকুরী প্রদান করে। তিনি আরো বলেন,কামালের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা যদি সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply