শফিক মুন্সি ::
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) এক নারী শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ নিয়ে সেখানে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। লাঞ্ছিতর অভিযোগ করা শিক্ষার্থীর নাম জান্নাতুল নওরীন উর্মি।তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত লাঞ্ছনার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা থানায় কোন লিখিত অভিযোগ জানানো হয় নি। তবে এ ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক – শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এমনকি তার রাজনৈতিক সতীর্থরাও বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশায় আছে বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সচেতন শিক্ষার্থী মহলের পক্ষ থেকে প্রক্টরের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিভিন্ন গুজবের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
উর্মির মতে, গত পহেলা মার্চ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সিঁড়িতে তাকে ঘিরে ধরে একদল মুখোশধারী। এ সময় সে চিৎকার দিলে তার মুখ চেপে ওই ভবনের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করে তারা। পরে তার হাতে থাকা জ্যামিতি বক্সের কাটা কম্পাস দিয়ে উর্মির স্পর্শকাতর অঙ্গসহ তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করা হয়। ঘটনার পর কোনমতে বাসায় ফিরে গেলেও নিরাপত্তার অভাবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।কিন্তু বাসায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত বুধবার দুপুরে উর্মিকে ভর্তি করা হয় শের-ই বাংলা মেডিকেলের মহিলা সার্জারি-২ ইউনিটে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী নিশ্চিত করেছেন উর্মির অভিযোগের গ্রহণযোগ্য কোনো ভিত্তি নেই। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের যেস্থানে তাঁর ওপর হামলার কথা বলা হচ্ছে সেখানে মুখোশধারী কোন ছেলের উপস্থিত হবার সুযোগ নেই। এমনকি আশেপাশে বিভিন্ন বিভাগের অবস্থান হওয়ায় ঐ স্থানে সামান্য ধ্বস্তাধস্তি হলেও সেটা দৃশ্যমান হবার কথা। কিন্তু গত পাঁচদিনেও এ ঘটনার কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী পাওয়া যায় নি। সিসিটিভি ফুটেজেও এখন পর্যন্ত ঐ হামলার কোনো আলামতের হদিস পায় নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষার্থী এমন ঘটনার ব্যাপারে দিয়েছে চাঞ্চল্যকর অভিমত। তাদের মতে, সামনে সেখানকার ছাত্রদলের নতুন কমিটি হবে। সেই কমিটিতে সভাপতি পদ পেতে মরিয়া হয়েই উর্মি এমন হামলার মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে। যাতে কেন্দ্রে তিনি নিজেকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির হামলার শিকার বলে জাহির করতে পারেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে উর্মির অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। ঘটনাটি বিশ্লেষণে বৃহস্পতিবার সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করেছে সেখানকার প্রক্টরিয়াল বডি। প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস জানান, কয়েকটি গণমাধ্যমের বরাতে বুধবার রাতে আমি ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত হই। পরদিন সকালেই আমাদের শিক্ষকদের কয়েকজন মেয়েটিকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছে। আমরা ব্যাপারটা খতিয়ে দেখছি। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রেজা শরীফ জানান, তারা ঘটনাটিতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে প্রেস রিলিজ দেওয়া হয়েছে।তবে ঘটনাটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে তিনি নিজেও নিশ্চিত নন বলে মতামত দিয়েছেন । ছাত্রদলের সহ-সভাপতি অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম সাইদ বলেন, আমরা পুরো ঘটনাটির একটি সুষ্ঠু তদন্ত আশা করছি।কারণ সঠিক তদন্তের মাধ্যমেই আসল ঘটনাটি জানা যেতে পারে৷
এদিকে,শিক্ষার্থী নির্যাতন ও সহিংসতার গুজব প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার প্রক্টরের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।সেদিন বিকেলে স্মারকলিপি প্রদানকারী মাটি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজয় বিশ্বাস শুভ জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনায় এক ধরণের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অনেকগুলো ঘটনাই মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে যেগুলোর মধ্যে কিছু গুরুতর আবার কিছু ছাত্রছাত্রীদের মনে দ্বিধার সৃষ্টি করেছে। আমরা চাই প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে সত্যিকার ঘটনা তুলে ধরুক। স্মারকলিপি প্রদানকারী আরেক শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আলীম সালেহীও একই সুরে কথা বলেন। তাঁর মতে, সাম্প্রতিক শিক্ষার্থী লাঞ্ছিতর একটি ঘটনা সবার কাছেই অবিশ্বাস্য লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক্ষেত্রে স্বপ্রণোদিত হয়েই ঘটনাটির তদন্ত করুক। যদি ঘটনাটির সত্যতা পায় তবে আক্রমণকারীদের বিচারের আওতায় আনুক। যদি ঘটনাটি মিথ্যা হয় তবে গুজব সৃষ্টিকরে যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় পর্যায়ে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply