খবর বরিশাল ডেস্কঃ সড়কে মৃত্যুর মিছিল সারা বছরই প্রত্যক্ষ হয়। তবে ঈদের মৌসুমে যেন দুর্ঘটনার মড়ক লাগে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদযাত্রার আগে-পরে আজ পর্যন্ত দুই শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিন শতাধিক মানুষের। এর মধ্যে কেবল গতকাল বিকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারা দেশে গত সড়কে প্রাণ গেছে ২৬ জনের।গত ৫ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত সময়ের এই পরিসংখ্যান জানিয়েছেন রোড সেফটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান।সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সংগৃহীত পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ৫ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত মোট ২৮২টি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
এসব দুর্ঘটনায় ৩০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এই দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১২৩ জনই মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়।’সাইদুর রহমানের এই পরিসংখ্যান গতকাল সকাল থেকে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে আরও দুর্ঘটনা যোগ হয়ে আজকের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭। সেই হিসাব অনুযায়ী গত ৫ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই বিকাল পৌনে ৫টা পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১৬ জন।সারাদেশে একের পর এক এসব দুর্ঘটনার দায় রাষ্ট্রকে দিতে চান বাংলাদেশ রোড সেফটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে দেশের গণপরিবহন খাত নৈরাজ্যপূর্ণ।
তাই এসব দুর্ঘটনার সব দায় রাষ্ট্রের।’রাজধানীর বাসগুলো মহাসড়কের বাস থেকে অনেক বেশি বেপরোয়াভাবে চলে অবিযোগ করে সাদুর রহমান বলেন, ‘কারণ আনফিট ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়িগুলো পুলিশ ও অন্যদের চাঁদা দেয়। যেসব গাড়ি চাঁদা দেয় না, রুট পারমিট ঠিক আছে এবং ফিট, সেসব গাড়ি সড়কে ঠিকমতো চলে।’সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধের জন্য দুটো সুপারিশ রাখেন তিন। বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেয়া ও সচেতনতা সৃষ্টি করার মাধ্যমে দুর্ঘটনা বন্ধ বা কমানো যেতে পারে।সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নাগরিক, নাগরিক সংগঠন ও সরকারের দায়িত্ব আছে বলে মন্তব্য করেন রোপ সেফটির নির্বাহী পরিচালক।তিনি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেয়ার দায়িত্ব শুধু সরকারের। ক্ষমতাও সরকারের। এর জন্য বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিক করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করা ও চাঁদাবাজি বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে।’সাইদুর রহমান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগটাই বড় কাজ। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ না নিয়ে শুধু সচেতনতা সৃষ্টি করে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে না।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘একজন রাস্তা দিয়ে খুব সাবধানে যাচ্ছে। কিন্তু বাস তাকে চাপা দিয়ে গেল। এটা তো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা।’গতকাল সকাল থেকে দেশজুড়ে সংঘটিত দুর্ঘটনা-গতকাল ভোরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় বাসচাপায় মারা যান এক রিকশারোহী। তার নাম আরিয়ান ইব্রাহীম বিশ্বাস। কিছুদিনের মধ্যে তার সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন রিকশাচালক জালাল।নিহত ইব্রাহীমের বাড়ি বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলায়। বাবার নাম সান্টু বিশ্বাস। পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারে মামা কবির হোসেনের কাছে থাকতেন তিনি।টাঙ্গাইলে দুই দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনসহ আটজন নিহত হয়েছেন।বগুড়ার কাহালুতে প্রাইভেটকার ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা গেছেন চারজন।সিরাজগঞ্জে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের খালকুলা এলাকায় বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুরে ট্রাকের ধাক্কায় লোকমান হোসেন (৮০) নামে এক কৃষক মারা যান।বেলা ১২টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার উজানিশহরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন (৪৫) ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক চাঁন মিয়া (৫০) নিহত হন।গাজীপুরের পুবাইলে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন মারা গেছেন। ভোরে পুবাইলের কলেজ গেট এলাকায় ট্রাক-লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে লেগুনার এক যাত্রী নিহত হন।
অন্যদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুকুন্দিরবাগ এলাকায় দুই অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত হন আরেক যাত্রী।জলঢাকার টেংগনমারী-মীরগঞ্জ সড়কের কিসামত বটতলা শান্তিনগর বাজারে বেপরোয়া গতির একটি ট্রাকের চাপায় এক ভ্যানচালক মারা যান।ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন।গত ঈদুল ফিতরের পরিসংখ্যান-বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি তথ্যমতে, ২৬ এপ্রিল ঈদযাত্রা শুরু ধরে কর্মস্থলে ফেরার শেষ দিন ১০ মে পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত ও ৮৪৪ জন আহত হয়েছেন। ২০২১ সালের ঈদুল ফিতরের তুলনায় এবার ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১৪.৫১ শতাংশ, নিহত ২২.৩৫ শতাংশ ও আহত ২৬.৩০ শতাংশ বেড়েছে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply